ছবি: প্রতীকী
কৃষ্ণকুমার দাস: অনলাইনে ডেবিট কার্ড থেকে মাত্র দশ টাকা পেমেন্ট করতে গিয়ে দশ লাখ টাকা খোয়ালেন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধা। পেশাগত জীবনে ব্যাংক কর্মচারী থাকা ওই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার অ্যাকাউন্ট থেকে জীবনের সমস্ত রোজগারই প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে বলে গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অঞ্জলি বসাক নামে ৭২ বছরের ওই বৃদ্ধা থাকেন বালিগঞ্জের ১৮/২১ ফার্ণ রোডে। শুক্রবার বৃদ্ধা জানিয়েছেন, “মোবাইল কোম্পানি থেকে ফোন করছি বলে একজন কেওয়াইসি আপডেট করতে বলেন। আপডেট না করলে ফোনের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বয়স হয়েছে, একা মানুষ থাকি, ফোনটাই আমার বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাই ভয় পেয়ে গিয়ে ওনার কথামতো আপডেট করতে গিয়ে জীবনের সমস্ত রোজগার দশ লাখ টাকা চলে গেল।” ব্যংক কর্মচারীর এমন প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় বিস্মিত পুলিশ কর্তারা। তদন্তে নেমেছে লালবাজারের (Lalbazar) সাইবার সেলও।
জানা গিয়েছে, এলাহবাদ ব্যাংকের কর্মচারী হিসাবে ১২ বছর আগে অবসর নেওয়া অঞ্জলি বসাক একাই থাকেন ফার্ণ রোডে। রাজকুমার মালহোত্রা নামে একজন গত ৪ সেপ্টেম্বর ফোন করে বলেন, “এয়ারটেল থেকে বলছি, আপনার ফোনের কেওয়াইসি (KYC) এখনও আপডেট হয়নি। এক্ষুনি না করলে ফোন বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাকে লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছি, সেখানে ক্লিক করে ১০ টাকা পেমেন্ট করে আপডেট করে নিন।” সরল বিশ্বাসে তিনি ওই লিঙ্কে ক্লিক করে পর পর কতগুলি তথ্য দেন। এরপর দশটাকা পেমেন্ট করতে গিয়ে বৃদ্ধা বলেন, পেটিএম থেকে টাকা দেব। কিন্তু ফোনের ওপারে থাকা প্রতারক বলে, ডেবিট কার্ড থেকে দিন। যে কোনও একটি ব্যাংকের কার্ড থেকে টাকা দিতে বলেন। এরপর যেই তিনি তাঁর কার্ড থেকে টাকা দেন, ধীরে ধীরে টাকা ডেবিট হতে শুরু করে। বৃদ্ধা রাজকুমারকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, “অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কমছে কেন? আমার তো দশ টাকা দেওয়ার কথা।” উত্তরে প্রতারক ওই বৃদ্ধার বিশ্বাস অর্জনের জন্য, কিছু টাকা ফের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। বলে, ওই দেখুন টাকা ফিরে গিয়েছে। এভাবেই আপডেট হয়ে যাবে।” কিন্তু টানা পাঁচদিন ধরে নানাভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে দশ লাখ টাকা তুলে নেয় প্রতারক চক্র।
একজন ব্যাংক কর্মচারী হয়ে এমন প্রতারিত হওয়ার বিষয় নিয়ে লোকলজ্জায় কাউকে বলতে পারছিলেন না ওই বৃদ্ধা। ঘরেই মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলেন ক’দিন ধরে। শেষে বৃহস্পতিবার ব্যালকনিতে বিবর্ণ চেহারায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশি টুটুল গুপ্ত জানতে চান কিছু সমস্যা হয়েছে কি না। তখনই তিনি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন এবং নিঃস্ব হওয়ার ঘটনাটি বলেন। খবর পেয়ে স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর তথা পুরপ্রশাসক বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়াহাট থানায় এফআইআর করতে পাঠান। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, জামতাড়া গ্যাংয়ের এটা নিখুঁত অপারেশন। দশ টাকা পেমেন্টের নামে লিংক পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধার মোবাইলের মিরর (প্রতিচ্ছবি) নিজের মোবাইলে তৈরি করে তথ্য হাতিয়ে পুরো টাকাটি আত্মসাৎ করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.