স্টাফ রিপোর্টার: এমএস, এমসিএইচ। নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে পেডিয়াট্রিক সার্জারির এমন ওজনদার ডিগ্রি। খুঁড়তে গিয়ে দেখা গেল বেবাক ভুয়ো। আর এমনই জালিয়াত চিকিৎসকের উপর শিশুরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ভার দিয়েছিল কলকাতার এক প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতাল। শিশুমৃত্যুতে গাফিলতির একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এবার আলিপুরের সেই সিএমআরআই হাসপাতালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। অযোগ্য চিকিৎসককে দিয়ে সদ্যোজাতর অস্ত্রোপচার করানোর জন্য ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হল সিএমআরআইকে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা মৃত শিশুর বাবা আরসে আজমের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ‘ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন।’
ঘটনার শুরু ২০১৭ এপ্রিলে। অন্তঃসত্ত্বা ফিরদৌস জাহান সিএমআরআই হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও মলত্যাগ করতে পারছিল না সন্তান। হাসপাতালেরই পেডিয়াট্রিক সার্জন ডা. বিশ্বজিৎ ভাদুড়ির অধীনে ভরতি করা হয় শিশুটিকে। মাত্র চারমাসে একরত্তির উপর তিনটি অস্ত্রোপচার করে ওই ডাক্তার। তিনটি অস্ত্রোপচার বাবদ ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা নিয়েছিল হাসপাতাল। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অসুখের সঙ্গে লড়তে লড়তেই নিথর হয়ে পড়ে একরত্তি। এরপরেই কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে শিশুটির পরিবার।
শুনানি চলাকালীন দু’পক্ষকেই ডেকে পাঠান স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়। সমস্ত বক্তব্য শোনার পর ডা. বিশ্বজিৎ ভাদুড়িকে তার নামের পাশের ডিগ্রির প্রমাণ দাখিল করতে বলে কমিশন। কিন্তু কেঁচো খুড়তেই বেরিয়ে পড়ল কেউটে! দেখা যায় খাতায় কলমে ডা. ভাদুড়ি স্রেফ এমবিবিএস। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের যে সব ডিগ্রি তিনি প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন তা যাচাই করে দেখেনি সিএমআরআইও। এরপরেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল আর রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে চিঠি দেয় কমিশন। জানতে চাওয়া হয় আদৌ ডা. ভাদুড়ির শিশুরোগ বিষয়ক কোনও ডিগ্রি আছে কি না। কিন্তু দুই কাউন্সিলই জানিয়ে দেয়, পশ্চিম জার্মানি থেকে পাওয়া যে ডিগ্রি তিনি দেখিয়েছেন তাকে মান্যতা দিচ্ছে না রাজ্য এবং দেশের মেডিক্যাল কাউন্সিল।
নিজের ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ডা. বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি। তিনি জানিয়েছেন, “পশ্চিম জার্মানি থেকে আমি এই ডিগ্রি পেয়েছি। তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। ডিগ্রির বিষয়ে কিছু জানতে হলে জার্মান দূতাবাসের কাছে জানতে চান। কারণ তাঁরাই আমায় এই ডিগ্রিগুলো দিয়েছেন।” গোটা ঘটনায় হতভম্ব আজম পরিবার। তাঁরা জানিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সিএমআরআইতে চিকিৎসা পেতে গিয়েছিলাম। আমার ছেলেটাকেই ওরা মেরে ফেলল। টাকা নিয়ে আর কী করব? ওই চিকিৎসকের কঠিনতম শাস্তি চাইছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.