অর্ণব আইচ: ধারের ৯ হাজার টাকা বাকি ছিল। সেই টাকা আদায় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছিল বন্ধুদের মধ্যে। কিন্তু তার জেরে যে বন্ধুকে খুনের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে যাবে, তা ভাবতেও পারেনি কেউ। তাই দু’মাস ধরে সেই হত্যাকাণ্ডের কিনারাও হয়নি। কিন্তু এতদিন পর মৃতের বাবার সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নামতে না নামতে ২ দিনের মধ্যেই কিনারা হয়ে গেল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুবকের বুকের ৪টি হাড় ভাঙা, মাথার পিছনে আঘাত। তাতেই খুনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। গড়িয়াহাট থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে চার বন্ধুকে। সকলেই খুনের ঘটনায় নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের।
ঘটনা মার্চ মাসের ২৬ তারিখ। গড়িয়াহাট লাগোয়া পূর্ণদাস রোডে বাড়ির সামনে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় যুবক বিনোদ দাসকে। তাঁর বন্ধুরাই থানায় গিয়ে বন্ধুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে কান্নাকাটি করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এরপর নিয়মমতো শেষকৃত্য হয় বিনোদের। পরিবারের সদস্যরা মৃত্যু নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করেননি। ছেলের এমন মর্মান্তিক পরিণতির সময় বাড়িতে ছিলেন না বিনোদের বাবা। সম্প্রতি তিনি ফিরেছেন কলকাতায়। এক প্রতিবেশীর কাছে সেদিনের ঘটনা শুনে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি ফের পুলিশের দ্বারস্থ হতেই মামলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়।
গোটা ঘটনার কিনারা করে পুলিশ জানিয়েছে, বিনোদকে ওইদিন ভোরবেলা কম্বল জড়ানো অবস্থায় দেখা যায় চার যুবকের সঙ্গে। এরপর সকালেই বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। একথা বিনোদের বাবাকে জানিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। তা শুনেই খটকা লাগে বাবার। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে দুই বন্ধু বাবলা ওরফে নীলাঞ্জন গোস্বামী এবং শুভদীপ ওরফে বাবু সাফ জানিয়ে দেয় যে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। বন্ধুর মৃত্যু তাদের ধাক্কা দিয়েছে। এরপর বিনোদের বাবা গড়িয়াহাট থানার দ্বারস্থ হয়ে ১৫ মে ছেলের মৃত্যুর তদন্ত নতুন করে শুরু করার আবেদন জানান। তাঁর কথায় গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। খতিয়ে দেখা হয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। তাতে দেখা যায়, মৃত যুবকের বুকে চারটি হাড় ভাঙা, মাথার পিছনে আঘাত। অর্থাৎ তাঁকে খুন করা হয়েছে। সন্দেহের ভিত্তিতে প্রথমে দুই বন্ধু বাবলা ও বাবুকে গ্রেপ্তার করে জেরা করে পুলিশ। তাতেই ভেঙে পড়ে সত্যি স্বীকার করে নেয় তারা। পরে গ্রেপ্তার হয় আরও দুই বন্ধু অরবিন্দ কুমার সাউ, যোগেন্দ্র চৌধুরী।দু’দিনের মধ্যেই ঘটনার কিনারা করে ফেলে পুলিশ।
কিন্তু কেন বন্ধুদের হাতেই খুন হতে হল বিনোদকে? জানা যাচ্ছে, পেশায় তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষক বাবলা ওরফে নীলাঞ্জনের থেকে ১৪ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন বিনোদ। ৫ হাজার ফেরত দিলেও বাকি ৯ হাজার টাকা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল দুই বন্ধুর মধ্যে। ঘটনার দিনও একসঙ্গে সকলে মদ্যপান করছিলেন। এমন সময় ফের ধারের টাকা শোধ দেওয়া নিয়ে বিনোদ-বাবলার মধ্যে বচসা হয়। তখন বাকি বন্ধুরা মিলে মারধর করে বিনোদকে। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি মারা হয়। সেইসঙ্গে মাথার পিছনে আঘাত করা হয়। এরপর বাড়ির সামনে এনে তাঁকে ফেলে দেওয়া হলে সেই আঘাতেই মৃত্যু হয় বিনোদের। তাই বাইরে থেকে তাঁর শরীরে কোনও আঘাত চোখে পড়েনি। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভালোভাবে দেখে স্পষ্ট হয়, অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়, খুন করা হয়েছে বিনোদকে। তাও মাত্র ৯ হাজার টাকার জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.