প্রতীকী ছবি
অর্ণব আইচ: কেউ ধাক্কা দিচ্ছেন দরজায়। কেউ বা এমারজেন্সি সুইচ টিপেই চলেছেন। জানেন চেঁচিয়ে লাভ নেই, তবু চিৎকার করছেন তাঁরা। এদিকে, মোবাইলের টাওয়ারও নেই। পার্ক স্ট্রিটের বহুতলে লিফটের ভিতর আটকে চারজন ছাত্রী। যে সমস্যার সমাধান করতে বহুতলটির কেয়ারটেকারদের বড়জোর মিনিট দুয়েক সময় লাগত, সেখানে কুড়ি মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দমবন্ধ পরিবেশে আটকে থাকতে হয় ওই ছাত্রীদের। শেষে এক ছাত্রীর কাকা বিধানসভার মার্শাল দেবব্রত মুখোপাধ্যায় নিজেই গিয়ে উদ্ধারকাজে নামেন। ঘটনাস্থলে যায় পার্ক স্ট্রিট থানা ও শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ ও দমকল। যখন লিফটের দরজা খুলে চার ছাত্রী বেরিয়েছেন, তখনও তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্ক।
পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার এই ঘটনার সূত্রপাত। পার্ক স্ট্রিট এলাকার বহুতল পার্ক সেন্টারের চারতলায় একটি ইনস্টিটিউটে ক্লাস করতে যান ছাত্র-ছাত্রীরা। ক্লাস শেষে চার ছাত্রী লিফটে ওঠেন। দোতলা পার হওয়ার পর হঠাৎই আটকে যায় লিফট। তাঁরা তখন দু’টি তলার মাঝে। ওই ইনস্টিটিউটের আধিকারিক সম্বরণ পাল জানান, চার ছাত্রীই এমারজেন্সি সুইচ টেপেন। তাঁরা ক্রমাগত লিফটের সিসিটিভির সামনে হাত নাড়তে থাকেন। বহুতলের সামনেই নিরাপত্তারক্ষীদের কন্ট্রোল রুম। সেখানে ১৫৭টি স্ক্রিনে সারাক্ষণ চলছে নজরদারি। ছাত্রীদের অভিযোগ, কেউ তাঁদের সাহায্য করেননি।
বিধানসভার মার্শাল দেবব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি তাঁর ভাইঝিকে আনতে হেস্টিংসের আবাসন থেকে বেরিয়ে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের মধ্যেই পার্ক সেন্টারের সামনে পৌঁছে যান। মিনিট কয়েক অপেক্ষা করার পর ভাইঝিকে দেখতে না পেয়ে পার্ক সেন্টারের কাছে খুঁজতে শুরু করেন তিনি। হঠাৎ একটি অচেনা মোবাইল থেকে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। সেই সময় সায়ঙ্কা তাঁর কাকাকে জানান, তাঁরা লিফটে আটকে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে পার্ক সেন্টারের লিফটের কাছে যান দেবব্রতবাবু। দেখেন, ডান দিকের লিফটটি আটকে রয়েছে।
তিনি ওয়াকিটকি হাতে এক নিরাপত্তারক্ষীকে বিষয়টি বলার পর ওই ব্যক্তি তাঁকে কন্ট্রোল রুমটিতে যেতে বলেন। তিনি কন্ট্রোল রুমে গিয়ে দেখেন, সিসিটিভির দিকে কারও নজর নেই। প্রত্যেকেরই গা-ছাড়া ভাব। তিনি ছুটে চলে যান চারতলায়। ওই শিক্ষাকেন্দ্রের আধিকারিকদের বিষয়টি জানান। এভাবে প্রায় কুড়ি মিনিট কেটে যায়। শিক্ষাকেন্দ্রটির এক আধিকারিক সুরজিৎ মাইতি জানান, তিনি বিষয়টি শুনেই কেয়ারটেকারদের জানানো হয়। রবিবার ছুটি থাকায় একজন লিফটম্যানও ছিলেন না সেদিন। ফলে পাশের বহুতল থেকে লিফটম্যান স্বরূপ মণ্ডলকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি লিফটের মেইন সুইচ বন্ধ করে আবার চালু করতেই লিফট নেমে আসে একতলায়।
ছাত্রী ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা অভিযোগ, মূল গাফিলতি কেয়ারটেকারদেরই। তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি। যদিও এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, সিসিটিভিতে হাত নাড়তে দেখেই লিফটের দায়িত্বে থাকা জে পি সিং দৌড়ে গিয়েছিলেন। তবে এমারজেন্সি অ্যালার্ম যে বাজেনি, তা স্বীকার করেছেন তাঁরা। সুপারভাইজার কৃষ্ণচন্দ্র খানের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে সমস্যা হয়েছিল। তবে যেখানে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা। সেখানে দু’ঘণ্টা সময় কেন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.