স্টাফ রিপোর্টার: এতদিন সাধারণ নাগরিকের এটিএম কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো প্রচু অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। অনেক প্রবীণ মানুষের পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকেও হাজার হাজার টাকা অনলাইনে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কতৃর্পক্ষ নাজেহাল হচ্ছিলেন। কিন্তু এবার খাস কলকাতা পুরসভার চেক ও অফিসারের সই ‘ক্লোন’ করে গুরুগ্রামে বসেই ২৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল কুখ্যাত হ্যাকাররা। ঘটনার জেরে পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে মঙ্গলবারই পুলিশে এফআইআর করেছে পুরসভা। একইসঙ্গে পুরসভার সমস্ত আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।
এতদিন ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিনকোড বা অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল হ্যাকাররা। ভিন রাজ্য ও ভিন দেশে বসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও অধিকাংশ ফেরত পাওয়া যায়নি। বস্তুত এই কারণে সমস্ত ব্যাংক থেকেই পিন কোড বা অ্যাকাউন্ট নম্বর না জানানোর জন্য গ্রাহকদের মেসেজ পাঠিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম যে তথ্য জানিয়েছেন, তাতে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন চেকে লেনদেন করা সমস্ত গ্রাহকই। বিশেষ করে যাঁরা বড় মাপের লেনদেন করেন তাঁরা উদ্বিগ্ন এই ভেবে, যে কোনওদিন তাঁদের চেক ও সইও ক্লোন হতে পারে। মেয়র এদিন জানান, “ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি চেক ও পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাক্ষরকারীর সই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘ক্লোন’ মারফত কর্পোরেশনের তহবিল থেকে ২৩ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আপাতত পুরসভার সমস্ত অ্যাকাউন্ট থেকে ‘স্টপ-পেমেন্ট’ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত না নতুন চেকবই ও নতুন সই চালু হবে, ততদিন পর্যন্ত কোনও চেক দেওয়া যাবে না। ব্যাংক কতৃর্পক্ষও এই লেনদেন বন্ধ রেখেছে।” স্বভাবতই চেক না পাওয়ায় পুরসভার কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে তহবিল থেকে যাতে ‘ক্লোন’ করে হ্যাকাররা আরও টাকা তুলতে না পারে, সেই জন্য ওই চেক ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখা হয়। পুরসভার ব্যাখ্যা, যেহেতু মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সই জাল হয়েছে, তাই অন্য ব্যাংকের থেকে টাকা তুলে নিতে পারে হ্যাকাররা। বস্তুত এই কারণেই পুরসভার তহবিল আছে এমন সমস্ত ব্যাংকগুলিতেই নতুন সই ও কোড পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। পুরসভা থেকে যে সমস্ত চেক ইতিমধ্যে ইস্যু করা হয়েছে সেগুলি চিফ মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অফিসারের কাছে নিয়ে এসে জমা দিলে নতুন করে পেমেন্ট দেওয়া হবে বলেও মেয়র জানিয়েছেন।
[প্রয়াত গায়ক প্রতীক চৌধুরি, শোকস্তব্ধ সংগীতজগত]
চেক জালিয়াতি করে ২৩ লক্ষ টাকা হ্যাকাররা তুলে নিলেও ব্যাংক কতৃর্পক্ষ তা পুরসভাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী। ফিরহাদের দাবি, “পুরসভা নয়, ব্যাংকের গাফিলতির কারণেই টাকা হ্যাকাররা হাতিয়ে নিতে পেরেছে। তাই ব্যাংকই পুরসভাকে ভরতুকি হিসাবে ফেরত দিয়েছে। ওরা হয়তো বিমা সংস্থা থেকে টাকাটা পেয়ে যাবে।” এদিন মেয়রের নির্দেশে নিউ মার্কেট থানায় এফআইআর করা হয়। রাতেই পুরসভার অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি লালবাজারের সাইবার ক্রাইম বিভাগকেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে গুরুগ্রামের যে শাখা থেকে এই হ্যাকাররা কলকাতা পুরসভার ২৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেখানকার থানাতেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কতৃর্পক্ষ এফআইআর করেছে। পুরসভার চিন্তা, অনেকগুলি অ্যাকাউন্ট থেকেই লেনদেন হয়। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোন কোন চেকবই ক্লোন হয়েছে এবং সই নকল হয়েছে, কত টাকা দেশ বিদেশ থেকে তোলা হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা নেই। কারণ, পুরসভায় ভিন রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা নানা সামগ্রী সরবরাহ করে। টেন্ডারে অংশ নিয়ে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম দেয়। কোন পথে এই চেক হ্যাকারদের হাতে গেল এবং ক্লোন করা হল, তা নিয়েই এখন পুলিশের পাশাপাশি পুরসভার অফিসাররা তদন্ত করে দেখছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.