কৃষ্ণকুমার দাস: উত্তরে বৈষ্ণোদেবী থেকে দক্ষিণের তিরুমালার তিরুপতি, মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী মন্দির, পূর্বে পুরীর জগন্নাথ মন্দির, সাঁচির স্তূপ, একই সঙ্গে দেখতে চান? সঙ্গে বাংলার দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটের মতো মহাতীর্থক্ষেত্র দর্শনের পুণ্য অর্জন করতে হলে এবার একটা পুজোমণ্ডপে পা রাখলেই হবে। আর সেই ঠিকানা হল, গড়িয়াহাটের হিন্দুস্থান ক্লাব (Hindustan Club)।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সমস্ত অতীত ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে এবারের পুজোভাবনায়। মূল ভাবনা, ‘দ্বেষ নয়, মনে দেশ, রেখেই ‘স্ব-অধীন’। দেশের সমস্ত ঐতিহাসিক বিষয় ও মাদার টেরিজা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে একই মণ্ডপে তুলে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন ক্লাব সভাপতি তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
প্রায় তিন হাজার তেলের টিন কেটে কেটে পুরাতনী স্থাপত্য ও সৃষ্টিকে নতুন আঙ্গিকে হাজির করছেন থিমশিল্পী অনির্বাণ। নয় নয় করে তিন মাস ধরে একটা টিম দিন-রাত ধরে পরিশ্রম করে ফুটিয়ে তুলছে দেশের বিভিন্ন পুরাতনী শহরের অবয়ব। নেতৃত্বে পুরপিতা সৌরভ বসু। মণ্ডপে ঢুকতে গেলে প্রথমেই ভগৎ সিং, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি, নেহরু, কালামদের ছবি চোখে পড়বে। রাস্তার দু’পাশে পুরী, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের প্রবেশপথের দু’পাশের নানা দোকানের প্রতিরূপ উঠে এসেছে মণ্ডপে। হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া-সহ শহরের নামী রেস্তঁরা ও উত্তর কলকাতার পুরাতনী গলিপথের বাস্তব অনুভূতি ফিরে পাবেন হিন্দুস্থান ক্লাবের মণ্ডপে। যিনি এই পুজোভাবনা তুলে ধরার মূল কারিগর সেই চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘ইউনেসকো (UNESCO) পুজোর মধ্যে যে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটাই মণ্ডপে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।’’
বারোয়ারি পুজোর (Durga Puja 2022) মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে লড়াই হয়েছিল তাও এই পুজোয় তুলে ধরেছে পুজো কমিটি। শিল্পী অনির্বাণের প্রশ্ন, “মহাকাশযান থেকে পরমাণুশক্তি সবই আমরা অর্জন করেছি, কিন্তু সত্যিই কী স্ব-অধীন হতে পেরেছি? জাতিবিদ্বেষ থেকে কি প্রকৃতপক্ষে মুক্ত করতে পেরেছি মানবিক চেতনাকে?” সিদ্ধান্তের ভার দর্শকদের হাতে ছেড়েছেন শিল্পী। বলছেন, পুজো দেখে সিদ্ধান্ত নিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.