নিরুফা খাতুন: ৮৮ বছর পেরিয়ে অবশেষে ঔৎকর্ষের স্বীকৃতি। হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে মৃৎশিল্পী গোপেশ্বর পালের স্টুডিও। মহানগর কলকাতার ঐতিহ্যের মুকুটে জুড়তে চলেছে আর একটি পালক। জি পাল অ্যান্ড সন্স স্টুডিও। কুমোরটুলি ছাড়িয়ে ৪০এ কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিটে রয়েছে জগৎবিখ্যাত শিল্পী গোপেশ্বর পালের (Gopeshwar Paul) এই সৃষ্টিক্ষেত্র, যার পথচলার সূচনা ১৯৩৩ সালে। প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর এই স্টুডিওয় কে না রয়েছেন! শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ বাংলার সব মনীষীর মৃৎমূর্তি। প্রয়াত শিল্পীর পরিবারের প্রস্তাব মেনে এবার সেখানে সংগ্রহশালা তৈরি করবে রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি রাজ্য হেরিটেজ (Heritage) কমিশনের সদস্যরা গিয়ে স্টুডিও পরিদর্শন করে এসেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “গোপেশ্বর পাল অসাধারণ মৃৎশিল্পী ছিলেন। তিনি কাউকে একবার দেখে মিনিটের মধে্য অবিকল তাঁর মূর্তি তৈরি করতে পারতেন, হাতে যেন জাদু ছিল। ওঁর স্টুডিওকে এবার হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁর স্টুডিওকে সংগ্রহশালা করা হবে।”
কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির বিস্ময়বালক গোপেশ্বরের জন্ম সম্ভবত ১৮৯২ সালে। ওঁর হাতের স্পর্শে প্রাণ পেত মূর্তি। ১৯১৫ সালে ঘূর্ণিতে এসেছিলেন তদানীন্তন ছোটলাট লর্ড কারমাইকেল, তিনিও গোপেশ্বরের প্রতিভা দেখে অবাক হন। আর্ট কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউনের উদ্যোগে গোপেশ্বর ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডে এক শিল্প প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আধ মিনিটের মধ্যে মাটির কুকুর এবং ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে ছুটন্ত ঘোড়া বানিয়ে বিদেশে স্বনামধন্য শিল্পীদের অবাক করে দেন তিনি, লন্ডনে স্বর্ণপদক জিতে নেন।
এরপর পদার্পণ কলকাতায়। ১৯৩৩ সালে কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিটে স্টুডিও খোলেন। তাঁর তৈরি প্রথম মূর্তি বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী এখনও সেখানে বিরাজমান। ১৯৮৫ সালে গোপেশ্বর প্রয়াত হলে পুুত্র সিদ্ধাশ্বর পাল স্টুডিওর দায়িত্ব নেন। নিঃসন্তান সিদ্ধেশ্বরের মৃত্যুর পর থেকে গোপেশ্বরের শ্যালক ব্যোমকেশ পাল স্টুডিও সামলাচ্ছেন। এই অমূল্য সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সরকার এগিয়ে আসায় ব্যোমকেশবাবু খুশি। “গোপেশ্বর ছিলেন জাদুকর শিল্পী। মাটির তাল ওঁর হাতে প্রাণ পেত। ওঁর অনুরোধে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও এখানে সিটিং দিয়েছিলেন নিজের মূর্তি বানাতে। একবার নয়, তিন-তিনবার।”– মন্তব্য ব্যোমকেশবাবুর।
দেশ-বিদেশের রামকৃষ্ণ মিশনেও ছড়িয়ে রয়েছে গোপেশ্বরের হাতে গড়া বহু মূর্তি। ব্যোমকেশবাবু বলেন, “অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল, প্রয়াত শিল্পীর তৈরি মূর্তি দিয়ে একটা মিউজিয়াম হোক। কিন্তু অনেক মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, স্টুডিওর অবস্থাও ভাল নয়।” এবার সংগ্রহশালার জন্য স্টুডিওকে সংস্কার করে তুলবে হেরিটেজ কমিশন। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.