কৃষ্ণকুমার দাস: যাঁরা ঘরে বাইরে সংগীতের চর্চা করেন বা বাচিক শিল্পী, তাঁদের জন্য ‘হাওয়া-বদল’ মানে ঋতু পরিবর্তনের মুখে একটা জরুরি অথচ প্রয়োজনীয় ঠিকানা বলছি। আর যাঁরা নতুন প্রেম করছেন, বান্ধবী বা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মিষ্টি গলায় কথা বলতে হবে? তাঁরাও রহস্য উন্মোচনে এই ঠিকানায় আসুন। তবে হ্যাঁ, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এই ঠিকানায় এলে শিল্পী থেকে মন্ত্রী, সবার মতো আপনিও নতুন প্রেমে পড়বেন। বারেবারে তার টানে আসতেই হবে টালিগঞ্জ নেতাজি নগর ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের উল্টোদিকে ঋষি অরবিন্দ পার্ক। রাস্তার মুখে ‘অভিনব পেয়ালা’ নামে নয়া প্রেমের ঠিকানা।
দেশ-বিদেশের ৪০ পদের নানা স্বাদের চা পাওয়া গেলেও প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী থেকে মন্ত্রী, সবারই চাহিদা একটাই– লঙ্কা চা। ‘লেমন ফ্লেভারে’ খাঁটি দার্জিলিং চায়ে কাঁচা লঙ্কার মিঠে ঝাঁজ ভূ-ভারতে দ্বিতীয় নেই। অভিনব এই চা তৈরির পদ্ধতি সম্পূর্ণ অ্যারোমেটিক, ভেষজ গুণে এক কাপে ধরা গলা পুরনো অবস্থানে ফিরতে শুরু করে। মিনিট কয়েক পরে দ্বিতীয় কাপে চুমুক দিলেই ‘ঠান্ডা-গরমে’ ধস নামা গলায় স্পষ্ট উচ্চারণে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠশিল্পী থেকে রাজনৈতিক বক্তারাও। কাচের পেয়ালায় ঈষৎ হলদে পানীয়, কাঁচা লঙ্কার ডিঙা ভাসিয়ে দেওয়ার ফাঁকে গূঢ় রহস্য ফাঁস করলেন মহানগরে ‘লঙ্কা চা’-এর স্রষ্টা কাশীনাথ সূত্রধর। আর এই চায়ের দাম মাত্র ৩০ টাকা। চাইলেই মুহূর্তে পাবেন শ্রীলঙ্কার ওলোং টি, হিমালয়ের ঢালের লিঙ্গিয়া বা আফ্রিকার জাং-পনা চা। মাত্র ৩০ টাকা থেকে শুরু করে এক কাপ চা ৫২০ টাকা পর্যন্ত আছে। চায়ের স্রষ্টা কাশীনাথের আবিষ্কারক, স্থানীয় বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
কিন্তু কেন? আসলে কী? ‘ধরা’ গলা মুহূর্তে বদলে দেওয়ার নেপথ্যে ‘লঙ্কা’ চায়ের রহস্য কতখানি? বাড়ি ফেরার পথে রাত পৌনে ১১টায় ‘লঙ্কা’ চায়ের স্টলে গলা ভেজাতে নেমেছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রহস্য জানতে চাইলে অরূপ শোনালেন কাওয়ালি গানের শিল্পীদের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার এক অত্যাশ্চর্য কাহিনি। বললেন, ‘‘অনেকেই জানে না, একদিনে তিন-তিনটি জলসায় উচ্চস্বরে গলা ফাটিয়ে গান করলেও কাওয়ালি শিল্পীদের অনেকেই কাঁচা লঙ্কা খেয়েই স্বর ঠিক রাখেন। অনেকদিন আগে লখনউয়ের এক প্রবীণ শিল্পী আমায় শুনিয়েছিলেন এমন টোটকার গোপন সূত্র।’’ লঙ্কা চা খেয়ে একটু এগোলেই পাশের স্টলে মাত্র ৬টায় মনমোহিনী স্বাদের ধনেপাতার চপ বা ১৫ টাকায় লটে মাছের ফ্রাই। শেষপাতে চমকে দিতে অপূর্ব স্বাদ নিয়ে সারির শেষ স্টলে ‘পকেট ফ্রেন্ডলি’ দামে পাবেন ‘লাইভ মোমো’। মটন বা কর্নচিজ মোমো কিংবা স্বাদ বদলাতে ‘কুরকুরে মোমো’ চাইলে অবশ্যই বিকেল হলেই আসুন নেতাজিনগরে নিত্যদিনের এই খাদ্যমেলায়।
নেতাজিনগরের ঋষি অরবিন্দ পার্কে শীতের শেষে সংগীত মেলার সঙ্গে নয়া ‘ফুড পাথ’চালু করেন বিদু্যৎমন্ত্রী। টালিগঞ্জের সাত গরিব পরিবারকে পৃথকভাবে স্টল করে দেন তিনি। ৭টি স্টলের নামকরণ করেছেন টিম অরূপের চার মিড ফিল্ডার, কুণাল-অরূপ-যুগল-সুমন। স্টলের প্রথম ছয়টির নাম হল– অভিনব পেয়ালা, রুচির রসদ, পসরায় রসনা, বিশেষ আহার, স্বাদের সাথে সম্ভার মেলা। স্টলগুলোর নামের প্রথম অক্ষর পাশাপাশি বসালে বিদ্যুৎমন্ত্রীর পুরো নাম যেমন হচ্ছে, তেমনই সাত নম্বর স্টলটি হল ‘সবার জন্য’। সত্যিই নেতাজি নগরের এই ‘ফুড পাথ’ কিন্তু বাংলার সবার জন্য, একবার এলেই জিভের স্বাদে, লঙ্কা চায়ে গলা ভিজিয়ে দেখতে পাবেন, সবাইকে আমন্ত্রণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.