তরুণকান্তি দাস: এ যেন ডলার বা সোনার দর। রোজ বদলায়। অথচ যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দূর দূর তক কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু তার দাম ঘিরেই যত বিভ্রান্তি। বিশেষ করে উৎসবের মরশুম এলেই যেন পাখনা গজায় তার। দুধ (Milk)। দশমীর বাজারে যা দুইয়ে নিচ্ছে মিস্টান্ন বাজারের অর্থনীতিকে।
খোলা বাজারে গরু বা মোষের এক লিটার দুধের দাম কত? এর উত্তর দিতে ঢোঁক গিলছেন রাজ্যের দুগ্ধ সমবায়ের কর্তারাও। কিছুদিন আগেই বেড়েছে প্যাকেট দুধের দাম। মোটামুটি প্রতি লিটারে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। তার জেরে গরু এবং মোষের দুধের দামও ঊর্ধ্বগামী। কোম্পানি ভিত্তিতে সামান্য ফারাক থাকলেও মোটামুটি ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় প্যাকেটজাত এক লিটার দুধ মেলে। কিন্তু খোলা বাজারে গরু বা মোষের দুধ? তার দাম কত? কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এবং বাজার বলছে এবার রেকর্ড দামে বিকিয়েছে দুধ। করোনা আবহে বিহারে কিছু লোক চলে যাওয়ার কারণে জোগানে টান পড়ায় কিছুদিন এক লিটারের দাম গিয়ে ঠেকেছিল ২০ টাকা কম ১০০ টাকা! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। উৎসবের মরশুম চলছে। চলতি সপ্তাহে গরুর দুধ ৫৫ থেকে ৬০ এবং মোষের দুধ ৭০ টাকা পর্যন্ত লিটার পিছু বিকিয়েছে। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনও সংস্থা নেই। তাই নেই কোনও বাঁধন।
কলকাতায় দুধের জোগান দেয় জোড়াসাঁকো, নতুনবাজার, হাজরা ও শিয়ালদহের পাইকারি বাজার। ডানকুনি, খড়দহ, টিটাগড়, আমতলা, বারুইপুরের মতো শহরতলি থেকে আসেন খাটাল মালিকরা। তাঁরা দুধ বিক্রি করেন প্রতিদিন নিত্যনতুন দামে। যেমন জোগান, তেমন দাম। শহর ও শহরতলি থেকে খাটাল উচ্ছেদের পর জোগান কিছুটা হলেও কম। সেই জোগান মেটায় ছোট মিষ্টি দোকানদার, ছানা ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদকদের চাহিদা। বলা ভাল, সেখান থেকেই কিনতে বাধ্য হন। এটাই নিয়ম। বড় ব্যবসায়ী বা মিষ্টি উৎপাদকরা অবশ্য বছরভরের জন্য একটি চুক্তি করে রাখেন। দাম ওঠানামার আঁচ তাঁদের গায়ে লাগে না।
পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা রবীন পাল বলেছেন, “আমরা সারা বছরের জন্য জোগানদারের সঙ্গে চুক্তি করি। তাই দাম বাড়ুক বা কমুক, আমাদের একটা উৎপাদন ব্যয়ের নির্দিষ্ট হিসাব করা হয়ে থাকে। সমস্যায় পড়েন ছোট ব্যবসায়ীরা। এটা সরকার না দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।” প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান কে সি দাশের কর্তা ধীমান দাশ বলেছেন, “এটা হল অসংগঠিত বাজারের সমস্যা।” দুধের দামের উপর ছানার দাম নির্ভর করে। তার উপর আবার ঠিক হয় বিভিন্ন মিষ্টির (Sweet) দাম। বড় ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের দাম ধরে রাখতে পারেন। এবার তবুও মিস্টির দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে স্পেশাল আইটেমের ক্ষেত্রে। এবার যেমন পুজোর সময় হচ্ছে। সোমবার দশমী। ফলে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে চাইছেন দুধ ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের দুগ্ধ ফেডারেশনের এক কর্তা বলেছেন, “আমরা রাজ্যের বিভিন্ন সমবায়ের দুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু খোলা বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। মূল সমস্যাটা সেখানেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.