স্টাফ রিপোর্টার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: চিকিৎসক নয়, জলে ডোবা শিশুকে নিয়ে যাওয়া হল ইমামের কাছে। বেশ কিছুক্ষণ চলল ঝাড়ফুঁক। চোখের সামনে ঝরে গেল দুধের শিশু। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ভাঙনখালির এই ঘটনা বুঝিয়ে দিল অন্ধবিশ্বাসের শিকড় কত গভীরে। শিশুটিকে বাঁচাতে এলাকার কয়েকজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও কথা কানেই তোলেনি বাচ্চাটির পরিবার।
ইদ উপলক্ষ্যে মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ছোট্ট তাজমিরা খাতুন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সকালে থেকে ২ বছরের তাজমিরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের লোকজন তাজমিরাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে জানা যায়, খেলতে খেলতে পুকুরের জলে পড়ে যায় ছোট্ট তাজমিরা। বাড়ির পুকুর থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়। ডুবন্ত তাজমিরাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা মাথাতেই আনেনি শিশুটির পরিবার। পাড়ার ইমামকে ডেকে আনা হয়। ইমামের ধারণা ছিল জলের মধ্যে থাকা রাক্ষস, নাকি শিশুটিকে এভাবে কেড়ে নিয়েছে। রাক্ষসকে জব্দ করতে জলে লাঠির বাড়ি মারা হয়। পুকুর পারে একরত্তি কন্যাকে বাঁচানোর নামে চলে ঝাড়ফুঁক, মন্ত্রপাঠ। এসব করতে করতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। তবুও প্রাণ ফেরেনি তাজমিরার। চলতে থাকে ইমামের কেরামতি। অবস্থা বেগতিক বুঝে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা শিশুটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অভিযোগ, একথা পাত্তাই দেয়নি তাজমিরার পরিবার। চোখের সামনে শেষ হয়ে যায় দুধের শিশুর জীবন।
এত বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরও হুঁশ ফেরেনি তাজমিরার পরিবারের। বরং ওঝাকে ডাকার ব্যাপারে তাঁরা নানারকম আজব যুক্তি সাজিয়েছেন। শিশুটির এক আত্মীয় কাজিমউদ্দিনের দাবি, জলে ডোবা শিশুকে নাকি এভাবেই বাঁচানো হয়। পাড়ায় এমন অনেক নজির রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতায় তারা ইমামকে ডাকেন। অথচ ভাঙনখালি থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল। বাসন্তী হাসপাতালও তেমন দূরে নয়। ডাক্তার, হাসপাতালের তোয়াক্কা না করে কুসংস্কারের বশে এমন অনেক তাজমিরা অকালে চলে যায়। অন্ধবিশ্বাসের কানাগলিতে তারা এভাবেই হারিয়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.