গোবিন্দ রায়: বন্ধ্যাত্ব কখনও বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজ সংক্রান্ত এক মামলায় বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এমনই মত প্রকাশ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিশেষত ‘প্রিম্যাচিওর মেনোপজের’কারণে সন্তানধারণে অক্ষম হয়ে পড়া স্ত্রীকে বিচ্ছেদের কথা বলাটাও মানসিক নির্যাতনের শামিল বলে মনে করছে আদালত।
বন্ধ্যাত্বের কারণে স্ত্রী যখন মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন, সেই সময় তাঁকে পরিত্যাগ করার যুক্তিও নাকচ করেছেন। তবে যেহেতু বিচ্ছেদের মামলা নয়, তাই নিম্ন আদালতে চলা মামলাটিতে হস্তক্ষেপ করেনি হাই কোর্ট।
২০১৪-র জানুয়ারিতে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়েছিল। ন’বছরের বিবাহিত জীবন। তারই মধ্যে স্ত্রী বন্ধ্যাত্বের শিকার। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা ওই মহিলার চিকিৎসা চলছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সে। ২০১৭-র জুনে স্ত্রীর গর্ভধারনে অক্ষমতা ও শারীরিক অসুস্থতাকে হাতিয়ার করে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন স্বামী। এক মাস বাদে বেলেঘাটা থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন স্ত্রী। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ২০১৯-এর ডিসেম্বরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন-সহ একাধিক ধারায় চার্জশিট দাখিল করে। স্বামী এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
সম্প্রতি তারই শুনানিতে বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে না চাইলেও তাঁর পরিষ্কার পর্যবেক্ষণ, বন্ধ্যাত্ব কখনওই বিবাহ বিচ্ছেদের যুক্তি হতে পারে না। বরং বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নত, বাবা-মা হওয়ার একাধিক উপায় রয়েছে। স্বামীকে বিচারপতির পরামর্শ, এই সব পরিস্থিতিতে স্বামীর আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। স্ত্রীর পাশে থেকে মনে জোর দেওয়া উচিত, যাতে দু’জনেই সমাজে সুস্থ ভাবে মেলামেশা করতে পারেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘যেখানে প্রিম্যাচিওর মেনোপজের কারণে প্রাথমিক ভাবে স্ত্রী বন্ধ্যা হয়ে পড়েছেন, এখনও পর্যন্ত যিনি সন্তান ধারণ করতে পারেননি, তাঁর কাছে এটা একটা বিশাল বড় মানসিক ধাক্কা। তার উপর মাতৃবিয়োগ তাঁকে আরও বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এই অবস্থায় স্ত্রীর পাশে থাকাই স্বামীর কর্তব্য।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.