ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: চাপের মুখে অবশেষে নতিস্বীকার। অভয়া তহবিলে কত কোটি টাকা জমা রয়েছে, তার হিসাব দিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট চাঁদা উঠেছে ৩ কোটি ১৮ লক্ষ। খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ ৩২ হাজার ৬৭৯ টাকা। বাকি টাকা কী করবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা, স্বাভাবিকভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৯ এপ্রিল, জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। তাতে ছিলেন দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো, আসফাকুল্লা নাইয়া-সহ আরও অনেকেই। তাঁরা জানিয়েছিলেন অভয়া তহবিলের জমা খরচের হিসাব দেবেন। সেইমতো বুধবার তাঁরা সেই হিসাব প্রকাশ করেন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে।
অভয়া ক্লিনিক: ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৪৪
লালবাজার অভিযান: ৬৬ হাজার ৬১৬
মেডিক্যাল কলেজ গণ কনভেনশন: ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৪৫
মিছিল: ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৬৫
স্বাস্থ্যভবন অভিযান: ১২ লক্ষ ৭ হাজার ৩৮৩
বন্যাদুর্গত এলাকায় অভয়া ক্যাম্প: ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৫৫
এসএসকেএমে গণ কনভেনশন: ৯৬ হাজার ৫৬০
মহালয়ার মিছিল: ৭ লক্ষ ১৬ হাজার
ধর্মতলার অনশন: ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৫৭
লিফলেট, পোস্টার: ১ লক্ষ ১২ হাজার ৫৫০
মেডিক্যাল কলেজ মঞ্চ ও গ্যালারি (১২ আগস্ট,২০২৪-১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪): ১৫ লক্ষ ৩ হাজার ৯৭০
রক্তদান শিবির: ৬ হাজার
আইনি সহায়তায় খরচ ও অন্যান্য: ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৭৪৩
বিভিন্ন সামগ্রী: ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৮০
প্রিন্টিং ও স্টেশনারি: ৫৮ হাজার ৬৭৯
অন্যান্য: ৫৩ হাজার ৯৫৬
ব্যাঙ্ক চার্জ: ১ হাজার ৯৪৫
বলে রাখা ভালো, গত বছরের ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ধর্ষণ করে ওই তরুণী চিকিৎসককে খুন করা হয়। এই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্তে নামে। সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। এই ঘটনায় বর্তমানে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়। তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে ফুঁসে ওঠেন সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ। সেই সময় আন্দোলন চলাকালীন অভয়া তহবিল তৈরি হয়। ওই তহবিল নিয়ে দানা বাঁধে বিতর্ক।
অনেকেই বলছেন, চাপের মুখে পড়ে এদিন জমা খরচের হিসাব দিতে বাধ্য হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। হিসাব অনুযায়ী, যে পরিমাণ টাকা অভয়া তহবিলের জমা পড়েছে তার প্রায় একভাগও খরচ হয়নি। তাই বাকি টাকা রয়ে গিয়েছে। আবার বর্তমানে আর জি কর আন্দোলনের ঝাঁজ একেবারে নেই বললে চললে। তা সত্ত্বেও এই টাকা অভয়ার বাবা-মার হাতে তুলে দেওয়া হয়নি কিংবা মামলা মোকদ্দমা সংক্রান্ত কাজেও লাগানো হয়নি। তাহলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বর্তমানে কীভাবে খরচ করা হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে। যদিও জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের দাবি, মামলার খরচ সামলাতে এই বিপুল টাকা খরচ করা হবে। তাহলে এতদিন কেন ওই খাতে জমা টাকা খরচ করা হল না, সে প্রশ্নও অযৌক্তিক নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.