ছবি: অমিত ঘোষ।
অভিরূপ দাস: আয় বেড়েছে অনেকটাই। তবু কমল না ঘাটতি (Deficit)। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের তুলনায় ঘাটতি কমলেও এখনও পুরসভার কপালে সেই ‘অভাবী বাজেট।’ যার জেরেই ‘বাজে’ খরচ বন্ধ করছে পুরসভা। থাকছে না বৃহত্তর কলকাতার আলাদা তহবিল। যাকে বলা হত ‘অ্যাডেড এরিয়া ফান্ড।’ এর জন্য অতিরিক্ত খরচ হত পুরসভার। কলকাতার ১০০ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য ছিল আলাদা কোটা। সেই কোটা অনুযায়ী টাকা পেত এই ওয়ার্ডগুলি। শুক্রবার কলকাতা পুরসভার (KMC) বাজেট পেশ করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দেখা যেত ফুটপাথ ভাল আছে। তবু তা ভেঙে আবার নতুন করে টাইলস বসাতে হত। ভাল রাস্তা কেটে আবার নতুন করে রাস্তা করতে হত। এই কোটা বন্ধ করা হয়েছে।’’ এই ‘অ্যাডেড এরিয়া ফান্ড’ বন্ধ করে এবার থেকে কাজ হবে শুধু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। শুধুমাত্র যেখানে রাস্তাঘাট ভেঙে যাবে, সেখানেই কাজ করা হবে।
মেয়রের বক্তব্য, বৃহত্তর কলকাতা বলে আর কিছু থাকবে না। পুরোটাই এখন এক। শুধু তাই নয়, ঘাটতি ঠেকাতে পুরসভার কাউন্সিলরদের গাড়ি ব্যবহারের অতিরিক্ত খরচে রাশ টানার কথাও বলেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, ‘‘অপ্রয়োজনীয় গাড়ির ব্যবহার তেলের খরচেও রাশ টানতে হবে।’’ পুরসভা সূত্রে খবর, পেট্রল-ডিজেলের (Petrol-Diesel) ব্যবহারে পুর কমিশনারের নির্দেশ মানছেন না কেউই। নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেকেই জ্বালানি ব্যবহার করছেন। তাই পুরসভার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রল, ডিজেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে দেখা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় পুরসভার আয় বেড়েছে অনেকটাই। ৩২১৯.৫৮ কোটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪০.৭৯ কোটিতে। আয় বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যয়। গত অর্থবর্ষে যেখানে কলকাতা পুরসভার ব্যয় হয়েছিল ৩৪৩৭.৫৮ কোটি টাকা, এবার তা বেড়ে ৪৬৮৬.৭৯ কোটি টাকা। কেন মিটছে না ঘাটতি? মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, রাজস্ব (Dবাবদ আয় ৯৩১ কোটি থেকে বেড়ে ১৩৩১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নতুন পে কমিশন বাবদ মাইনে দিতে গিয়েই পুরসভার মাথায় হাত। কলকাতা পুরসভার স্থায়ী কর্মী ১৬ হাজার। নতুন পে কমিশন অনুযায়ী স্থায়ী ১৬ হাজার কর্মী ছাড়াও পেনশন এমনকী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন দিতে হয় পুরসভাকে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, বছরে এই বেতন দিতে গিয়ে পুরসভার খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যার ফলেই রয়ে গিয়েছে ঘাটতি।
টানা দু’বছর চেয়েও ট্যাক্স (Tax)বাড়াতে পারেনি পুরসভা। কোভিডের কারণে লকডাউন ছিল টানা দু’বছর। ব্যবসাপত্র শিকেয় উঠেছিল। টান পড়েছিল আমজনতার রোজগারে। পুরসভা সূত্রে খবর, সেই কারণে চেয়েও নানা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ট্যাক্সের বোঝা চাপানো যায়নি। তবে রোজগারের জন্য এবার কিছু ক্ষেত্রে কড়া হচ্ছে পুরসভা। ইউনিট এরিয়া ট্যাক্সের সংশোধনের ফলে কলকাতার অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের দিতে হবে অতিরিক্ত ট্যাক্স। মেয়রের আশ্বাস, অভিজাত এলাকার বসতির বাসিন্দাদের তা গুনতে হবে না।
মালিক নেই, এমন ফাঁকা বাড়ির ট্যাক্স দেওয়া হয় না দীর্ঘদিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন বাড়ি দখল হয়ে গিয়েছে। যারা দখল করে রেখেছে তাদের কাছ থেকেই এবার বাড়ির বকেয়া ট্যাক্স নেবে পুরসভা। চলতি অর্থবর্ষে বিজ্ঞাপন বাবদ ১০০ কোটি টাকা আয় করতে চায় পুরসভা। গত বছর এই আয় ছিল ৭৫ কোটি। এর জন্য আলাদা একটি বিজ্ঞাপন নীতি তৈরি করতে চলেছে পুরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, যত্রতত্র আর বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না। এক একটি রাস্তায় থাকবে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিজ্ঞাপন। অস্থায়ী হোর্ডিং বন্ধ করবে পুরসভা। নতুন এই ডিজিটাল ডিসপ্লেতে বিজ্ঞাপন দিতে খরচও কমানো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.