ফাইল ছবি
অভিরূপ দাস: একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার পর মঞ্চে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ত্যাগ করলেন মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যাপিকা বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতদৃষ্টিতে যা অরাজনৈতিক আলোচনার মঞ্চ ছিল বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিশির বাজোরিয়া মঞ্চে উঠতেই তার সুর কাটল।
রবিবার বিকেলে আইসিসিআর-এ ‘বাংলায় ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও রাজনীতির পারস্পরিক সম্পর্ক’ বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখার জন্য ডাকতেই উষ্মা প্রকাশ করলেন তিনি। বললেন, “ভেবে এসেছিলাম অনেক কিছু বলব। কিন্তু আমি জীবনে সত্যের সঙ্গে কখনও আপস করিনি। আমার কাছে যখন সংস্থার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, বলা হয়েছিল এটা অরাজনৈতিক সংগঠন।” তাঁর সোজাসাপটা বক্তব্য, “শিশির বাজোরিয়াকে মঞ্চে আসতে দেখেই বুঝতে পারলাম এদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ আছে। সেটা আমায় আগে থেকে জানানো উচিৎ ছিল। দর্শক আসনে যে কেউ থাকতে পারে। কিন্তু মঞ্চে চলে আসা মানে এটা তাদের অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়া।”
এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ দিব্যানন্দ। কিন্তু তাঁরা কেউই আসেননি। ভারত সেবাশ্রম সংঘের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন দিব্যজ্ঞানানন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভারতমাতার ছবিতে মাল্যদান করতে বলা হয় বৈশাখিদেবীকে। উশখুশের সেই শুরু। এরপর দিব্যজ্ঞানানন্দকে শিশির বাজোরিয়া পুষ্পস্তবক দিতে মঞ্চে উঠলেই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় বিষয়টি।
বৈশাখিদেবী বেড়িয়ে যাওয়ার পর মঞ্চ থেকে উঠে পড়েন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। রুষ্ট বৈশাখিদেবী অনুষ্ঠান কক্ষের বাইরে এসে বলেন, “দর্শক আসনে যে কেউ বসে থাকতে পারে। আমি যখন দর্শকদের দিকে তাকাই তখন হিন্দু বা মুসলিম নয়, মানুষ দেখতে পাই। আমার কাছে ভারতমাতা আরএসএস বা বিজেপির সম্পত্তি নয়। ভারতমাতার সন্তান আমি যতটা একজন মুসলিমও ততটাই।” অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে যে প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন তাও জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, “যে পড়াশোনা করে আজ এখানে এসেছিলাম তা আর বলার মতো পরিস্থিতি নেই। কারণ একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কিছু প্রতিনিধি মঞ্চে উঠলেন। এরপর আমার কোনও বক্তব্যই আর নিরপেক্ষ থাকবে না। কিন্তু রাজনৈতিক রং লাগিয়ে কথা বলাটা আমার উদ্দেশ্য নয়।”
উদ্যোক্তারা তাঁকে ডেকেছিলেন পলিটিক্যাল সায়েন্সের একজন শিক্ষক হিসেবে। তাঁর কথায়, “আমি যদি জেনে আসতাম অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক রং আছে তাহলে এতটা খারাপ লাগত না। এটা আমাকে আগে জানানো হয়নি। আমি রাজনৈতিক জগতের লোক নই। উদ্যোক্তারা যদি বলতেন বিজেপির লোক থাকবে আমি আসতাম। সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতাম। তাতে হিপোক্রেসি হত না। যেটা হল সেটা আমার কাছে খুব দুঃখের। আমাকে অন্ধকারে রেখে কোনও কাজ করানো যায়নি।” এদিকে গোটা ঘটনায় বিস্মিত শিশির বাজোরিয়া। তাঁর কথায়, “শোভনবাবুও তো একজন রাজনীতির লোক। আমি স্বামীজিকে ফুল দিয়ে কী দোষ করলাম!”
ছবি: অরিজিৎ সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.