স্টাফ রিপোর্টার: কবজিটা একটু মোটা হলেই হয়তো বেঁচে যেতেন কসবার কাঞ্জিলাল। হয়তো দরজায় আটকে থাকা হাতের সিগন্যালও পৌঁছে যেত মোটরম্যানের কাছে। আটকাতো না দরজা। ঘটতো না দুর্ঘটনাও। সজলবাবুর দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত, লাইনে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে সজলবাবুর। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দরজায় হাত আটকালেও ওই ম্যাগাজিন বিক্রেতা তা বের করে নিতে চাননি। দরজার বাইরে যে চার-পাঁচ ইঞ্চি জায়গা রয়েছে, সেখানে পা দিয়েই ময়দান পৌঁছে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। কারণ চালক এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করান। আর তাতেই দরজার ভিতরে আটকে থাকা হাতের মুঠোটা খুলে যায় তাঁর। পড়ে যান লাইনে।
ডান পা প্রথম বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে। এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যান। যদি তাঁর হাতটা কোনও যাত্রী ভিতর দিয়ে ধরে থাকতেন, সেক্ষেত্রেও ওভাবেই ঝুলতে ঝুলতে ময়দান পৌঁছে যেতেন সজলবাবু। পড়ে যেতেন না লাইনে। দেখা গিয়েছে, ট্রেন ছাড়ার ১২ সেকেন্ডের মধ্যেই লাইনে পড়ে যান তিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও ওই ব্যক্তির বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। দেহে পড়ে যাওয়ার চিহ্নও রয়েছে।
মেট্রোর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নতুন যে এই মেধা রেকের দরজায় একটা ফিংগার প্রোটেকটিভ রাবার লাইনিং থাকলেও তার পরিধি একটু মোটা। নিয়ম মেনে হাত আটকালে দরজা বন্ধ হওয়ার কথা নয়। আবার চেপে যাওয়ারও কথা নয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত নিয়ম অনুযায়ী ২০ মিলিমিটারের বেশি পরিধি যুক্ত কিছু আটকালে তবেই দরজা আটকে যাবে। কিন্তু সরু কিছু আটকালেও ট্র্যাকশান বা পাওয়ার পেয়ে যায় ট্রেন। চালকও পেয়ে যান সিগন্যাল। শনিবার সন্ধ্যায় যা পেয়ে গিয়েছিলেন বলেই হয়তো ট্রেন চালান তিনি। কিন্তু হাতের কবজি যদি একটু মোটা হত, তবে পাওয়ার পেত না মেট্রো।
তবে হাত আটকে যাত্রী মৃত্যুর ঘটনা সুরক্ষা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে। কারণ কন্ডাক্টিং মোটরম্যানের দায়িত্ব সব যাত্রীরা ট্রেনে উঠেছেন কিনা তা কেবিন থেকে ঝুঁকে দেখে নেওয়া। তা না করলেও তাঁর কেবিনে এবং প্ল্যাটফর্মের মাথার উপর ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে, সেখানেও তাঁর দেখে নেওয়ার কথা ট্রেনের দরজা সব বন্ধ হয়েছে কিনা! কিন্তু তাও এদিন দেখা হয়নি। হলে ট্রেন ছাড়তে সংকেত দিতেন না তিনি। আর মেট্রোয় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে এসব গাফিলতিই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.