অভিরূপ দাস: মুক্তারাম নয়। এবার শিবরাম। অন্ধকার একটা গলি। কলকাতা পুরসভার ঠিকানায় তা ১৩৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট। এখানেই মেসে থাকতেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম লেখক শিবরাম চক্রবর্তী। নিজের লেখা রম্যরচনায় সে বাড়ি সমন্ধে শিবরাম লিখে গিয়েছেন, মুক্তারামে থেকে, তক্তারামে শুয়ে, শুক্তারাম খেয়েই তিনি শিবরাম হয়েছেন। তিনতলা পলেস্তারা খসা বাড়িটার মেরামত শুরু হয়েছে আগেই। হয়েছে রংও। হারিয়ে গিয়েছে শিবরামের হাতের লেখা! কীভাবে? দেওয়ালে রং করতে দিতেন না লেখক। সেখানে লেখা থাকত জরুরি বহু জিনিস, এর তার ফোন নম্বর। কারণ, খাতার মতো দেওয়ালের তো হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই!
এই ২০২৩ সালে ১২১ বছর পূর্তি হল শিবরামের। জন্মদিনে তাঁকে সেরা উপহার দিল কলকাতা পুরসভা। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের নাম বদলে করা হচ্ছে শিবরাম চক্রবর্তী স্ট্রিট। শুধু রাস্তা নয়, রাজ্য শিশু কিশোর অ্যাকাডেমির নামকরণও করা হোক বিখ্যাত লেখকের নামে। অ্যাকাডেমিতে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মেছিলেন শিবরাম চক্রবর্তী। জীবনের বেশিরভাগ সময় যিনি কাটিয়েছেন মুক্তারামবাবু লেনের ওই মেসবাড়িতে। ওই মেসবাড়িতে বসেই তৈরি করেছেন ঘনাদা, হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের মতো একের পর এক কালজয়ী চরিত্র।
উল্লেখ্য, মালদহ জেলার চাঁচোলের রাজবাড়ির উত্তরাধিকারী লেখক শিবরাম। পালিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। পরে তা নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেন পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। এই মেসবাড়িতে শিবরামের পড়শি যাঁরা ছিলেন তাঁরা এখনও বলেন তাঁর গল্প। বরাবর একই রঙের জামা পরতেন লেখক। ঘি রঙের সিল্কের শার্ট, পরনে শান্তিপুরি ধুতি আর পায়ে চপ্পল। শীতকালে জামার নিচে সোয়েটার পরে নিতেন, মেসের দেওয়ালে টাঙানো পারা-ওঠা পুরনো আয়নার সামনে সেভ করতেন। এই সমস্ত স্মৃতি বহন করে চলেছে ওই মেসবাড়ি। এখানেই লেখকের মৃত্যু হয়। প্রয়াণের সময় উপস্থিত হয়েছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.