অর্ণব আইচ: সিবিআই, ইডি, শুল্ক দপ্তর এমনকী, রাস্তাঘাটে হঠাৎ ‘পুলিশি তল্লাশি’ হলেও যেন তা জানানো হয় পুলিশকেই। গত মধ্য কলকাতায় পুলিশ, সিবিআই, শুল্ক দপ্তর আধিকারিক সেজে বিপুল টাকা ও সোনা লুঠ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মধ্য কলকাতায় ঘটেছে এরকম তিনটি ঘটনা। আর তাতেই সামনে এসেছে নতুন ‘স্পেশাল ২৬’ গ্যাংয়ের। দু’মাসে এই তিনটি ঘটনা একই গ্যাংয়ের, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। এর পিছনে মহারাষ্ট্রের কুখ্যাত ইরানি গ্যাং রয়েছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। রাতে পোস্তার কটন স্ট্রিট দিয়ে সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিলেন এক সোনার দোকানের কর্মী। তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় তিনজন। নিজেদের সিবিআই আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে জানায়, ব্যাগে করে বেআইনি সোনা পাচার হচ্ছে। তা তল্লাশি চালাতে হবে। তারা ওই ব্যাগ খুলে ৪০০ গ্রামের ৫৪টি সোনার হার হাতিয়ে নেয়। ৩৩ লাখ টাকার গয়না লুঠ করে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই ‘স্পেশাল ২৬’-এর টিম টার্গেট করছে বৃহত্তর বড়বাজারকেই। গত ২৯ জানুয়ারিতে মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকো থানা এলাকায় ঘটেছিল একটি ঘটনা। তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিট দিয়ে সোনার দোকানের এক কর্মী যাচ্ছিলেন। নিজেদের শুল্কদপ্তরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে তাঁর রাস্তা আটকায় চারজন। তাঁর ব্যাগ থেকে ১০০ গ্রাম সোনার গয়না লুঠ করে তারা। এই ব্যাপারে জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ওই ঘটনার পরের দিনই একই ধরনের ঘটনা ঘটে মধ্য কলকাতার ক্যানিং স্ট্রিটে। এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী সাড়ে ১৪ লাখ টাকা নগদ ব্যাগে করে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। তিন ব্যক্তি নিজেদের সিবিআই অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে ওই টাকা লুঠ করে নেয়। এই ব্যাপারে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আয়কর অফিসার সেজে বিধাননগরের বাগুইআটির বাড়িতে তল্লাশির নামে লুটপাট করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন এক সিআইএসএফ ইন্সপেক্টর ও মহিলা-সহ চার কনস্টেবল। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গোয়েন্দা পুলিশ ও তিনটি থানার আধিকারিকরাও এই ঘটনাগুলির তদন্ত শুরু করেছেন। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যায়নি। যদিও পুলিশের পক্ষে থেকে বৃহত্তর বড়বাজারের ব্যবসায়ী ও তাঁদের কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে যে, যদি কেউ সিবিআই, ইডি, শুল্কদপ্তর, এমনকী, পুলিশ পরিচয় দিয়েও রাস্তায় ব্যাগ তল্লাশি করে, তখন যেন ব্যক্তিটি ভয় না পেয়ে তাদের বলেন, স্থানীয় থানায় যেতে। সেখানেই যা তল্লাশি হওয়ার হবে। যদি তারা থানায় না যেতে চেয়ে জোর খাটানোর চেষ্টা করে, তখনই যেন তিনি স্থানীয় থানার পুলিশকে ফোন করে জানান। সেই ক্ষেত্রে তিনি ১০০ ডায়ালও করতে পারেন। এ ছাড়াও আয়কর, সিবিআই বা শুল্কদপ্তর পরিচয় দিয়ে কেউ যদি কোনও অফিসেও তল্লাশি চালাতে আসে, তখনও যেন একইভাবে থানা বা লালবাজারকে জানানো হয় বলে জানিয়ে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.