অভিরূপ দাস: এবার আরও শক্তিশালী হচ্ছে কলকাতা পুলিশের কৃত্রিম চোখ। যে চোখ ছড়িয়ে রয়েছে শহরের কোনায় কোনায়। প্রায়ই রাতের অন্ধকারে পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে বেহুঁশ করে বেরিয়ে যায় চারচাকা। তরুণীর নেকলেস ছিনতাই করে চম্পট দেয় বাইক আরোহী। তাদের ধরতে পুলিশের ভরসা রাস্তার ধারের ছোট্ট সিসিটিভি। তবে ২ মেগাপিক্সেলের সেই সিসিটিভি দেখে অপরাধী চিনতে নাজেহাল অবস্থা হত পুলিশের। তাই এবার আরও স্মার্ট হচ্ছে ক্যামেরা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার ধারের সমস্ত সিসিটিভির মেগাপিক্সেল বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে শহরের রাস্তায় ১৩০০ সিসিটিভি রয়েছে। সম্প্রতি সার্ভার মেনটেন্যান্সের জন্য তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফের তা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পুরনো ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। শহরের একাধিক রাস্তায় যানবাহনের ঊর্ধ্বগতির উপর নিয়ম জারি রয়েছে। স্কুলের আশপাশে, কিংবা দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় তিরিশ থেকে চল্লিশ কিলোমিটারের মধ্যেই গাড়ি চালানো দস্তুর। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই সে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখান গাড়ির চালকরা।
রাতের দিকেও মা উড়ালপুল-সহ শহরের একাধিক উড়ালপুলে গতির উর্ধ্বসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর অভিযোগ এসেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতিবছর এ রাজ্যে ৫ হাজার নিরীহ পথচারীর মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায়। কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অফ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের তেরোটি রাজ্যের মধ্যে পথ দুঘর্টনায় মৃত্যুতে কলকাতা অন্যতম। এই দুর্ঘটনার জন্য পঞ্চাশ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী পণ্য পরিবহণকারী ট্রাক, লরি। রাতের দিকে এই সমস্ত মালবাহী গাড়ি গতির ঊর্ধ্বসীমা না মেনে চলাচল করে। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমস্ত গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করতে এতদিন ভরসা ছিল শহরের সিসিটিভি। কিন্তু ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় গাড়ির স্পষ্ট ছবি ধরা অত্যন্ত কষ্টকর। অনেক ক্ষেত্রেই তাই দ্রুত গতিতে ছুটে চলা গাড়ির নম্বর বুঝতে বেগ পেতে হত পুলিশকে।
কিন্তু এবার ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বাড়ানোয় সহজেই ট্র্যাক করা যাবে গাড়ির নম্বর। শহরের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডেই ক্যামেরার আধুনিকীকরণ সম্পূর্ণ। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, লোকবলের অভাবে সমস্ত সিগনালে সার্জন থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই তাই ভরসা এই সিসিটিভি। কেন্দ্রীয় সরকারের আইন অনুযায়ী স্কুল বাস, ডাম্পার এবং দাহ্যবস্তু বহনকারী যানবাহন কোনও মতেই ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ তুলতে পারবে না। এর জন্য ওই সমস্ত যানবাহনে স্পিড লিমিট ডিভাইসও বেধে দেওয়ার নিয়ম হয়েছে। তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানায় সে কাজ শুরু হ্লেও এখনও এ রাজ্যে তা শুরু হয়নি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নজরদারি চালাতে হয় এই সিসিটিভির মাধ্যমেই। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মেগাপিক্সেল বেড়ে যাওয়ায় আগের থেকে অনেক সহজেই গাড়ির নম্বরপ্লেট চিহ্নিত করা যাবে।
এতদিন যে সমস্ত গাড়ি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে চলে যেত। তাদের এসএমএস-এর মাধ্যমে চালান পাঠিয়ে দেওয়া হত। এবার সেই সমস্ত চালানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সিসিটিভি ফুটেজও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, এরপর গাড়ির চালকরা নিজেদের দোষ অস্বীকার করার আগে দু’বার ভাববেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.