অভিরূপ দাস: আচমকা পথ চলতি হৃদরোগে আক্রান্ত। রাস্তাতেই কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যু! সারা দেশে ফি বছর ৭ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে’। তারমধ্যে ২২ শতাংশের বয়স পঞ্চাশ বছরের নীচে। রাস্তা ঘাটে সবসময়ই থাকেন ট্র্যাফিক পুলিশ। বাঁচানোর কায়দা জানলে তিনিই দিতে পারেন প্রাথমিক চিকিৎসা। সেই কথা মাথায় রেখেই এবার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশকে।
ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতাল কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক সার্জন, কনস্টেবল, সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিএলএস বা বেসিক লাইফ সাপোর্ট ট্রেনিং দিয়েছে ঢাকুরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতাল। প্রাথমিকভাবে পঞ্চাশজন ট্র্যাফিক পুলিশকে শেখানো হয়েছে সিপিআর। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে উদ্বোধন করেছেন এই প্রশিক্ষণ শিবিরের। ধীরে ধীরে শিবিরের মাধ্যমে বছর খানেক কলকাতা পুলিশের সমস্ত সার্জনকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বরুয়া জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি শিখে রাখলে রাস্তায় কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে প্রাথমিক সাহায্য করতে পারবেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশই। সূত্রের খবর, কলকাতার পর রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও এই কর্মসূচী শুরু করা হবে।
কী করে বোঝা যাবে কাকে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাস্তায় কেউ হঠাৎ বুকে অস্বস্তি বোধ করলে, চোখে অন্ধকার দেখলে এবং এলিয়ে পড়লে বুঝতে হবে রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তখন গলার পাশে ক্যারোটিড ধমনী বা হাতের পালস দেখতে হবে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে সাময়িক ভাবে রোগীর হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মিনিট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সময়। তারপর যত সময় যাবে রোগীর মস্তিষ্কে প্রভাব পড়বে। প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছন সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সিপিআর দিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। ট্র্যাফিক পুলিশদের শেখানো হয়েছে, কিভাবে রোগীর বুকের ঠিক মাঝখানে দু’হাতে চাপ দিতে হবে এমন ভাবে চাপ দিতে হবে যাতে সেই চাপ হৃদযন্ত্রকে আবার সচল করতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সিপিআর দেওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আচমকা হৃদযন্ত্র বন্ধ হলে চাপ দিয়ে আবার ছেড়ে দিতে হয়। যাতে চাপ দেওয়া অংশ আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এমন ভাবে চাপ দিতে হবে যাতে বুকের ওই অংশ আড়াই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে যায়। মিনিটে ১০০ বারের বেশি চাপ দেওয়ার নিয়ম। এসবই শেখানো হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশদের। বলে রাখা ভাল, দেশজুড়ে ২০২০ সালে পথেই আকস্মিক মৃত্যু ঘটে ৪৯ হাজার ৯২৫ জনের। তারমধ্যে ২৮ হাজার ৬৮০ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.