সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই…’। কয়েক যুগ আগে মান্না দে’র এই গান তোলপাড় ফেলেছিল সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে। গিটার হাতে বহু তরুণ তখন কফি হাউসে বসেই আড্ডা দিত। গলায় থাকত গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা নিখিলেশ, মইদুল, ডি সুজা, রমা রায়ের কথা। তাদের আড্ডা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায়। কিন্তু সেই ‘কফি হাউস’ হারায়নি। বছরের পর বছর কলেজ স্ট্রিটে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থেকেছে ঐতিহ্যবাহী ‘কফি হাউস’। কিন্তু কফি হাউসের সেই ইতিহাস বদলে দিল করোনা ভাইরাস। Covid-19 আতঙ্কের জেরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত কফি হাউস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল কর্তৃপক্ষ।
করোনা আতঙ্কে ত্রস্ত গোটা দেশ। একের পর এক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কলকাতায় ইতিমধ্যেই দু’জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের দু’জনকেই বেলেঘাটা আইডির আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। প্রথমজন টালিগঞ্জের যুবক। ওই তরুণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইংল্যান্ডে একটি জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই পার্টিতেই বেশ কয়েকজন করোনা সংক্রামিত যুবক-যুবতী উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকেই ওই তরুণের শরীরে ছড়ায় করোনা। কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানিংয়ে উপসর্গ ধরা পড়েনি। চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাস ইনকিউবেশনে থাকায় যন্ত্র তা বুঝতে পারেনি। বাড়ি ফেরার পর ওই পার্টির কথা জানতে পারে তরুণের পরিবার। স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগাযোগ করেন বাড়ির লোকজন। দপ্তরের পরামর্শে তরুণকে বাড়িতে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষায় Covid-19 পজিটিভ পাওয়া যায়।
এরপর শুক্রবার সকালে আরও একজনের দেহে করোনা ভাইরাসের সন্ধান মেলে। ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে শহরে ফেরেন লেক রোডের একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা ওই যুবক। ১৩ তারিখ বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পর তাঁকে বেলেঘাটা আইডিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে কথা তোয়াক্কা না করেই বাড়ি ফিরে যান তিনি। এরই মধ্যে যে ২ বন্ধুর সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে ফেরে ওই যুবক, তাঁদের শরীরে মেলে করোনার জীবাণু। তা জানার পরও চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবেননি লন্ডন ফেরত ওই যুবক। এই পরিস্থিতিতে লেক মল-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন তিনি। পরে বৃহস্পতিবার তিনি পরিবারের সদস্যদের জানান, তাঁর জ্বর হয়েছে। কাশিও রয়েছে। এরপরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
শহরে পরপর এমন দু’টি ঘটনার পর আর ঝুঁকি নিতে চায়নি কফি হাউস কর্তৃপক্ষ। তাই ৩১ মার্চ পর্যন্ত ‘কফি হাউস’ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয়, তবেই তারপর ‘কফি হাউস’ খোলার কথা তাঁরা ভাববেন বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.