সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা কেড়ে নিয়েছে জীবিকা। লকডাউনের প্রভাবে দিনমজুরদের মতোই শোচনীয় অবস্থা মৃৎশিল্পীদেরও। করোনার প্রভাবে তাল কেটেছে মানুষের নিত্যদিনের নিয়মে। আয়ের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। তাই পুজো করার ক্ষেত্রেও রাশ টেনেছে মধ্যবিত্ত বাঙালি। তারই প্রভাব পড়েছে কুমোরপাড়ায়। মাটির প্রতিমা তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ঘরে। কেনার লোক নেই। ফলে অর্থ সংকটে ভুগছেন শিল্পীরা। তাই এ বছর পয়লা বৈশাখে লক্ষ্মী-গণেশ না বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অনুন্নত কুম্ভকার সমিতির বরানগর আঞ্চলিক কমিটি।
চৈত্রের শেষ হয়ে বৈশাখ আসতে আর দিন দশেকও বাকি নেই। নতুন বছরের প্রাক্কালে, এই সময় জমজমাট থাকে কুমোরপাড়া। সারি দিয়ে লোক আসে লক্ষী ও গণেশ প্রতিমা কিনতে। দোকানদার তো বটেই, অনেক গৃহস্থের বাড়িতেও পয়লা বৈশাখে বা অক্ষয় তৃতীয়ায় পূজিত হন ধনের দেবী ও সিদ্ধিদাতা। কিন্তু এবছরের চিত্রটা অন্য। বৈশাখ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলেও কুমোরপাড়ায় ভিড় নেই একেবারেই। অবশ্য ছবিটা বদলাতে শশুরু করেছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। যবে থেকে ভয়াল করোনা গ্রাস করেছে দেশকে, তবে থেকেই ভাঁটা পড়েছে প্রতিমা কেনাকাটায়। অন্নপূর্ণা পুজো ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। কিন্তু গুটিকয়েক প্রতিমা ছাড়া বাকি সবই পড়ে রয়েছে মৃৎশিল্পীদের ঘরে। প্রতিমা তৈরিতে যে খরচ হয়েছিল, তার বিন্দুমাত্রও ওঠেনি। তার উপর এই সময় বিদেশ থেকে মূর্তি গড়ার অফার আসে। সেখান থেকেও কিছু টাকা পাওয়া যায়। এবছর সেসব নেই। আমেরিকা, স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানির যা পরিস্থিতি, তাতে আশার আলো দেখছেন না শিল্পীরা। তাঁরা একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন পরিস্থিতি যা, তাতে অর্ডার এ বছর আসবে না।
এই অবস্থায় পয়লা বৈশাখের জন্য লক্ষ্মী-গণেশ তৈরির করতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। যদি অন্নপূর্ণা প্রতিমার মতো সেগুলিও বিক্রি না হয়? তবে তো পথে বসতে হবে তাঁদের! তাই এই বছর লক্ষ্মী বা গণেশ মূর্তি না গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এরপর আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো রয়েছে কেন্দ্রের জিএসটি। সব মিলিয়ে প্রবল আর্থিক সংকটের সম্মুখীন মৃৎশিল্পীরা। এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অনুন্নত কুম্ভকার সমিতির বরানগর আঞ্চলিক কমিটির মৃৎশিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে তিনি যেভাবে ফুলচাষি, দুধ ব্যবসায়ী, পানচাষি ও কলকাতার ট্যাক্সিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আশা জেগেছে মনেও। তাঁদের আশা এই পরিস্থিতি থেকে যদি কেউ উদ্ধার করতে পারেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দিকেই তাই চাতকের দৃষ্টি বরানগর আঞ্চলিক কমিটির মৃৎশিল্পীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.