কলহার মুখোপাধ্যায়: এ যেন বাঘের ডেরায় ঘোগের হানা! গাঁজা কিনতে চেয়ে ফোন এল খোদ নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র শীর্ষকর্তার মোবাইলেই। প্রাথমিক বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে তিনি যতটা সম্ভব চেষ্টা করলেন ও প্রান্তের লোকটির ঠিকুজি জানার। ফোন রেখে অফিসারদের নির্দেশ দিলেন তাকে জালে ফেলার। তবে বৃহস্পতিবার নিউটাউনে এনসিবি অফিসে এই অভূতপূর্ব কাণ্ডের পরে বিভিন্ন মহলে জল্পনা দানা বেঁধেছে। খাস ব্যুরোর অন্দরেই মাদক পাচারের চক্র যে সক্রিয়, এই ঘটনা তারই ইঙ্গিত বলে কারও কারও অভিযোগ।
বর্ষবরণের প্রাক্কালে পানশালা ও নাইট ক্লাবে মাদকের রমরমা নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যথার অন্ত নেই। সে ব্যাপারেই এদিন শহরের বিভিন্ন পানশালাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন ব্যুরোর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপকুমার শ্রীবাস্তব। বৈঠক সেরে তিনি সবে নিজের চেম্বারে এসে বসেছেন। সেখানে তখন অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক। আচমকা টেবিলে রাখা অধিকর্তার মোবাইলটি বেজে উঠল। অচেনা নম্বর দেখে ইতস্তত করেও দিলীপবাবু ফোন ধরলেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে বদলে গেল তাঁর মুখচোখের হাবভাব। কুঁচকে গেল ভ্রু। শক্ত হয়ে উঠল চোয়াল। তবু নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে কথা চালিয়ে গেলেন। মিনিট তিনেকের আলাপচারিতা শেষে গম্ভীর মুখে বেল বাজিয়ে ডাকলেন ব্যুরোর এক অফিসারকে। নম্বরের ডিটেলস দিয়ে খোঁজ নিতে বললেন। যতটুকু বোঝা গেল, ফোন করেছে যে ব্যক্তি, তার নামের আদ্যক্ষর বি। ফোন নম্বরের প্রথম চারটি সংখ্যা ৯৬৭৪।
কীসের ফোন? যা পেয়ে ওঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পাল্টে গেল? অধিকর্তা জানান, ও প্রান্তের ব্যক্তিটি তাঁর কাছে দেড় কেজি গাঁজা চেয়েছে। এ-ও বলেছে, নিউটাউন-ভাঙড় লাগোয়া একটি রিসর্টে বর্ষশেষের আমোদে তা কাজে লাগবে। কিন্তু তাই বলে খোদ নারকোর ডিরেক্টরকে ফোন? কেন?
এই নিয়েই চলছে জল্পনা। ‘সর্ষের মধ্যেই ভূতের’ প্রসঙ্গ উঠে আসছে। অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, এনসিবি’র ভিতরের কেউ কেউ মাদক পাচারের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাঁদের ফোন নম্বর পাচারকারীদের হাতে সদা মজুত থাকে। সাম্প্রতিক কয়েকটি মাদক কাণ্ডের পর অধিকর্তার মোবাইল নম্বরও ওই পাচারকারীদের কারও কারও হাতে পৌঁছে গিয়েছে। ভুল করে তারাই খোদ অধিকর্তার নম্বরে কনসাইনমেন্টের কল লাগিয়ে বসেছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
যদিও ব্যুরোর কর্তারা এই সব তত্ত্বকে আমল দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এটা নেহাতই কাকতালীয় ঘটনা। দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, এ ধরনের ফোন ব্যুরোর অফিসাররা মাঝেমধ্যেই পেয়ে থাকেন আর তাতে অপরাধীদের জালে ফেলতে সুবিধাই হয়। “যে-ই ফোন করে থাকুক না কেন, শিগগিরি ধরা পড়বে।” বলেন অধিকর্তা। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান সম্প্রতি পাচার কাণ্ডে এক ব্যক্তি ধরা পড়ার আগে নারকোটিক্সের এক অফিসারকে মাদক চেয়ে এসএমএস করত। এর ফলে তার নাগাল পেতে সুবিধেই হয়েছিল। তবে স্বয়ং অধিকর্তার কাছে গাঁজা চেয়ে ফোন যে যারপরনাই বিরল ঘটনা, দিলীপবাবু কার্যত তা স্বীকার করে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার বারবেলায় ওই উটকো ফোনকে ঘিরেই সরগরম হয়ে রইল নারকোটিক্স ব্যুরোর অফিস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.