অভিরূপ দাস: কাজের সূত্রে এসেছিলেন কলকাতায়। আচমকাই অসুস্থ। তারপরই মৃত্যু। মৃত্যুর ঠিক আগেই টালিগঞ্জের আরএসভি হাসপাতাল সমন্ধে একটি লেখা লিখেছিলেন মোবাইলে। যেখানে তিনি ভরতি ছিলেন। আর তাতেই ঘনিয়েছে সন্দেহের মেঘ। মাত্র ৩৬-এ চলে গিয়েছেন বিশ্বজিৎ দেববর্মণ। বিধবা তরুণী অনুষ্কার আবেদন, এই মোবাইলের টেক্সটটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হোক। কেন হাসপাতাল সমন্ধে বিরূপ কথা লিখেছিলেন বিশ্বজিৎ? স্বামীর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে উদগ্রীব অনুষ্কা চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (CM Mamata Banerjee)। “দিদি একটু দেখুন।” মেলে সাড়া। গোটা ঘটনা রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত সেই মৃত্যুর কারণ বিচারের ভার রাজ্য স্বাস্থ্যনিয়ন্ত্রক কমিশনের হাতে।
রহস্য ঠিক কোথায়? দেববর্মন পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওবেসিটির অসুখে ভুগতেন বিশ্বজিৎ। তাঁর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র সে কারণে মৃত্যু অত্যন্ত অস্বাভাবিক। অক্টোবরের শেষে অফিসের কাজে মুম্বই থেকে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। শরীর খারাপ হওয়ায় ভরতি হন আরএসভি হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি কোভিড পজিটিভ (Corona Positive) হন। কোভিড পিরিয়ডে ফোন ব্যবহার করতে দিত না হাসপাতাল। চাইলেও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। যোগাযোগের অপ্রতুলতার কারণে ঠিক কোন পথে চিকিৎসা চলছে তা জানতেই পারেননি স্ত্রী। দুর্গা পঞ্চমীর দিন স্বামীর মৃত্যুর পর হাসপাতালে এসে মোবাইলটি হাতে পান অনুষ্কা। সেটা অন করতেই চমক। দেখতে পান হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্ধে একটি মেসেজ লেখা।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মারা যাওয়ার আগে একটা মেসেজ পাঠিয়েছেন ওই ভদ্রলোক। তাতে হাসপাতাল সমন্ধে কিছু লেখা ছিল। তবে হাসপাতালের বিরুদ্ধে কিংবা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি তাঁর স্ত্রী। কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনি শুধু জানতে চান ঠিক কী কারণে ওঁর স্বামী মারা গেলেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন। আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। হলফনামা করে ওই মহিলাকে সম্পূর্ণ অভিযোগ পাঠাতে বলা হয়েছে। হাসপাতালকেও বলা হয়েছে মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত নথি হলফনামার আকারে জমা দিতে।
স্বামীর মৃত্যুর পর আপাতত মুম্বই ফিরে গিয়েছেন অনুষ্কা। তিনি নিজেও এখন কোভিড পজিটিভ। সোমবার আইসোলেশন থেকেই অনলাইনে শুনানিতে অংশ নেন। দাম্পত্যজীবন অকালে শেষ। কিন্তু এর কারণ জানতে যতদূর যাওয়ার যাবেন তিনি। হাল ছাড়বেন না। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শহরের তথা রাজ্যের প্রথম সাড়ির অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাঁরাই খতিয়ে দেখবে বিশ্বজিতের চিকিৎসা কোন পথে এগিয়েছিল। ঠিক কোন পরিস্থিতিতে বিশ্বজিৎ মোবাইলে আরএসভি হাসপাতাল সমন্ধে বিরূপ কথা লিখেছেন আপাতত সেই রহস্যের জটই ছাড়াতে চায় কমিশন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.