ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রবীন্দ্র সরোবরে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ হতে চলেছে। জাতীয় জলাশয় হিসাবে চিহ্নিত রবীন্দ্র সরোবরের বদলে রাজ্য সরকার পূর্ব কলকাতার নোনাডাঙা ও দক্ষিণের পাটুলিতে দুটি বড় মাপের জলাশয় সংস্কার করেছে। পুণ্যার্থীদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন ঘাট। আগামী দিনে যাবতীয় সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই দু’টি জলাশয়েই করা হবে। এ বাবদ খরচ হবে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এই উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচারও শুরু হয়েছে।
রবীন্দ্র সরোবরে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আইনি লড়াই চলছিল। ১৯২০ সালে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের খনন করা এই জলাশয়টির স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে এটিকে রক্ষা করতে ন্যাশনাল গ্রিন বেঞ্চেও দীর্ঘ আইনি লড়াই হয়েছে।
ন্যাশনাল গ্রিন বেঞ্চের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল জলাশয়-সহ প্রায় ১৯২ একর জায়গা জুড়ে থাকা রবীন্দ্র সরোবরের স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে সব রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে রাজ্যকে। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এই পদক্ষেপ। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর প্রধান সচিব সুব্রত গুপ্ত জানিয়েছেন, “পূর্ব কলকাতার নোনাডাঙা ও দক্ষিণ কলকাতার পাটুলিতে দু’টি বড় মাপের জলাশয়কে সংস্কার করা হয়েছে। প্রায় ১৪ ও ৪ একরের দু’টি জলাশয়ের ঘাট বাঁধানো হয়েছে। আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী দিনে ছট পুজো-সহ সব রকমের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই দু’টি জলাশয়ে করা হবে।” প্রধান সচিব আরও জানিয়েছেন, “ন্যাশনাল গ্রিন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে রবীন্দ্র সরোবরের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করতে রাজ্য বদ্ধপরিকর। তাই এই পদক্ষেপ।”
রবীন্দ্র সরোবরের বদলে এই দু’টি জলাশয়ে ছটপুজো-সহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার জন্য গত কয়েক মাস ধরে কেএমডিএ-র তরফে লাগাতার প্রচার চালানো হয়েছে। কেএমডিএ-র আধিকারিকরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনাও করেছেন। এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “তাঁদের বাস্তব অবস্থা জানানো হয়েছে। আশা করি মহানগরীর বাসিন্দারা নতুন জায়গায় সামাজিক ও ধর্মীয় আচরণ করবেন।” সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেছেন, “রবীন্দ্র সরোবরকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে রাজ্যের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ইতিবাচক। তবে একবারে হবে না। সরকারের পাশাপাশি সবাইকে লাগাতার প্রচার চালাতে হবে।”
রাজ্যের একমাত্র জাতীয় জলাশয় হিসাবে চিহ্নিত রবীন্দ্র সরোবরে প্রচুর মাছ রয়েছে। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ করা হয়েছে। শীতকালে পরিযায়ী পাখি আসে। পর্যায়ক্রমে রাজ্য সরকার এটি সংস্কার করে। জলাশয়টির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরকে কলকাতার দ্বিতীয় ফুসফুস হিসাবে চিহ্নিত করেছেন রাজ্যের পরিবেশবিদরা। এই জলাশয়ের চারপাশে ৫০টিরও বেশি বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে। একটি সংগ্রহশালাও তৈরি হয়েছে। একাধিক রোয়িং ক্লাবও গঠিত হয়েছে এই জলাশয়কে কেন্দ্র করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.