দীপঙ্কর মণ্ডল: করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে চলছে লকডাউন। রাস্তাঘাটে লোকসমাগম নেই। ফলে সমস্যায় পড়েছেন দিন আনে দিন খায় মানুষ। রিকশাওয়ালা থেকে খুচরো বিক্রেতা, সবাই অথৈ জলে। কিন্তু লকডাউন কাটার জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে থাকলে তো আর হাঁড়ি চড়বে না। তাই অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে তারা বিকল্প পথের সন্ধান করছে। এমনই এক নিদর্শন মিলল উত্তর কলকাতার ছাতুবাবুর বাজারে। শুনশান রাস্তার ধারে বসে প্যাকেটে করে ফুচকা বিক্রি করতে দেখা গেল এক যুবককে।
মার্চ মাসের গোড়ার দিকের কথা। তখনও করোনা থাবা বসায়নি কলকাতা ও শহরতলীতে। বিকেলবেলা হলেই বিভিন্ন পার্কের সামনে বা রাজপথের ধারে ইতিউতি চোখে পড়ত ফুচকাওয়ালাদের। তাদের সামনে বেশ কিছুটা জায়গায় ভিড় করত নানা বয়সের মানুষ। ফুচকা খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা। বেশি না, দশ-বিশ চাকার ফুচকার স্বাদ নিয়েই তারা হাঁটা লাগাত গল্তব্যে। এভাবে খুচরে বিক্রিতে ভরে উঠত ফুচকাওয়ালাদের ভাঁড়ার। সেই দিয়েই হত পরের দিনের অন্ন সংস্থান। কিন্তু যবে থেকে করাল করোনা থাবা বসিয়েছে রাজ্যে, ফুচকাওয়ালাদের দেখা নেই শহরে। একে লকডাউনের প্রভাব, তার উপর প্রাণের ভয়ও তো আছে। কিন্তু পেটের দায় বড় দায়। তাই পেটের দায়ে প্রাণভয়কে দূরে সরিয়ে রেখে পথে নেমে পড়েছেন এক যুবক।
উত্তর কলকাতার ছাতু বাবুর বাজারের সামনে প্যাকেট করে ফুচকা বিক্রি করছেন তিনি। তবে এই পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রয়েছে তাঁর। চাই সুজি-ময়দা দিয়ে তৈরি ফুচকা রিফাইন তেলে ভেজে প্যাকেট করে বিক্রি করছেন। প্রতি প্যাকেট কুড়ি টাকা। কুড়িটি করে শুকনো ফুচকা রয়েছে প্রতি প্যাকেটে। অর্থাৎ প্রতি ফুচকার দাম এক টাকা। যেখানে অন্য সময়ে ১০ টাকায় ৩-৪টি ফুচকা খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়, সেখানে লকডাউনের বাজারে বেড়ে গিয়েছে সংখ্যা। এতে লাভ হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে যুবক বললেন, “কী করব? বেঁচে থাকতে কিছু তো করতে হবে। বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছে না। বাড়ির মানুষদের তো অভুক্ত রাখা যায় না। তাই করোনার ভয় একপাশে ঠেলে সরিয়ে রেখেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।”
কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, বিক্রি হচ্ছ দেদার। প্রায় ১০০ প্যাকেট নিয়ে এসেছিলেন। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। খদ্দেররা বলছেন, তাঁরা তো তবু মাঝেমধ্যে সকালের দিকে বাজারে আসতে পারছেন। টুকটাক জিনিস কিনছেন। পাঁচজনের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে যাঁরা কার্যত বন্দি? মহিলা বা শিশুরা? ফুচকা খেতে তো ওরাই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। ঘরে বসে একঘেয়ে জীবনযাপন করছেন তাঁরা। বাইরে বের হওয়ার অবকাশ নেই। তাই তাঁদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। একজন খদ্দের নাকি বলেছেন, শুকনো ফুচকা নিয়ে গিয়ে বাড়িতে তেঁতুল জল ও আলু সেদ্ধ দিয়ে নিজে হাতে ফুচকা খাইয়ে গিন্নিকে চমক দেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.