প্রতীকী ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা সময় দেওয়া হল হাসপাতালকে। তার মধ্যে সফটওয়্যার পরিবর্তন না করলে নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের (West Bengal Clinical Establishment Regulatory Commission) এহেন সিদ্ধান্তের নেপথ্যে হাসপাতালের ঘনঘন ‘নিয়ম অমান্য’। উল্লেখ্য, আমজনতাকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে ২০২০ সালে অ্যাডভাইসরি জারি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। যেখানে বলা হয়েছিল, ওষুধে অন্তত ১০ শতাংশ এবং চিকিৎসার অন্যান্য সরঞ্জামে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। রেডিওলজিক্যাল ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার খরচও বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কিন্তু ‘আমরি’ (AMRI) হাসপাতাল মানছে না কোনও সুপারিশ।
নতুন করে তার প্রমাণ দিলেন ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) বাসিন্দা সুনন্দা খান্ডেলওয়াল (৫০)। হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরো বিভাগে ভরতি হয়েছিলেন ওই মহিলা। ২৩ দিন চিকিৎসা চলার পর মারা যান তিনি। তিন সপ্তাহের কিছু বেশি সময় চিকিৎসা বাবদ তাঁর বিল হয় ৮ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। প্রথমে বিলের কারণে নয়, অন্য অভিযোগ নিয়েই স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল খান্ডেলওয়াল পরিবার। কী সেই অভিযোগ?
কম্বুটল ৮০০ ওষুধ দেওয়া হয়েছিল রোগীকে। কিন্তু তা না খাইয়ে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল কম্বিউনেস ৮০০। দুটি ওষুধের উপাদান কিছুটা আলাদা। রোগীর পরিবারের আরও অভিযোগ, যে অ্যান্টিবায়োটিকটা রোগীকে দেওয়া হচ্ছিল, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শরীরে।
কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, অভিযোগ জমা পড়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়। এখানেও তেমনটাই হয়েছিল। তারপরে যে ঘটনাটি ঘটে তা শিউরে ওঠার মতো। অভিযোগ, বেসরকারি ওই হাসপাতালের অপারেশনাল হেড এরপর রোগীর পরিবারকে ডেকে জানায়, “কমিশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গিয়েছে। ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে কমিশন।” যা সর্বৈব মিথ্যা। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আদৌ ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। এমন ঘটনা শোনামাত্রই আমরা অপারেশনাল হেডকে ডেকে পাঠাই। তিনি জানিয়েছেন, ভুল হয়ে গিয়েছে। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ওই ব্যক্তি।
তবে গোটা বিষয়টি হালকাভাবে নিতে রাজি নয় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। সুনন্দা খান্ডেলওয়াল যে বেডে ছিলেন তার দৈনিক ভাড়া ১০ হাজার টাকা। তারপরও আলাদা করে নেওয়া হয়েছে আরএমও চার্জ। গুরুতর অসুস্থ রোগীর ২৩ দিনের চিকিৎসা জন্য ১৯১ টা আন্ডারপ্যাডের টাকা নেওয়া হয়েছে। কমিশনের বিস্ময়, প্রায় ৩০ হাজার টাকা শুধু আন্ডারপ্যাডের জন্য কীভাবে নেয় হাসপাতাল? সম্পূর্ণ বিল জরিপ করে হাসপাতালকে ৯৫ হাজার ৪৯৮ টাকা ফেরত দিতে বলেছে কমিশন।
কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইচ্ছামতো বিল করে তারপর কিছু টাকা ছাড় দেয় ওই হাসপাতাল। রোগীর পরিবারকে ঠকাচ্ছে তারা। কমিশন অ্যাডভাইসরি তৈরি করে দেওয়ার পর ইচ্ছামতো বিল তৈরি করার জায়গা নেই। কমিশনের সদস্যরাও জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। কঠোর শাস্তি নেমে আসার আগে ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়ে নিয়েছে হাসপাতাল। কথা দিয়েছে কমিশনের অ্যাডভাইসরি অনুযায়ী বিল করবে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.