গৌতম ব্রহ্ম: অভিনেত্রী সাই পল্লবীর সচেতন পদক্ষেপকে কুর্নিশ জানাল কলকাতা। ত্বক বিশেষজ্ঞ থেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সবাই একযোগে ধন্যবাদ জানাল দক্ষিণের এই তারকা অভিনেত্রীকে। জানিয়ে দিলেন, পল্লবীর এই প্রত্যয় রুপোলি পর্দার মানুষদের মধ্যে যত সংক্রামিত হবে ততই স্টেরয়েড ক্রিমের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে ভারত।
২০০৬ সাল। রূপচর্চার অন্যতম উপাদান স্টেরয়েড ক্রিম আসলে অভিশাপ ডেকে আনছে আধুনিক সমাজে। সেই বছর থেকেই শুরু হয় আন্দোলন। যার পুরোভাগে ছিল ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ডার্মাটোলজিস্ট, ভেনেরোলজিস্ট অ্যান্ড লেপ্রোলজিস্ট’। সংগঠনের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. কৌশিক লাহিড়ী জানালেন, ২০১৩ সালে ‘ইতথসা’ নামে একটি টাস্ক ফোর্স গড়ে সরাসরি স্টেরয়েড ক্রিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেমিনার, পদযাত্রা হয়। সেই সঙ্গে চলে ওষুধ প্রস্ততকারী সংস্থা ও ড্রাগ কন্ট্রোলারদের বোঝানোর প্রক্রিয়া।
২০১৭ সালে এই কলকাতার রাজপথেই ডাক্তাররা বিরাট পদযাত্রার আয়োজন করেন। সোহিনী সরকার, ঐন্দ্রিলা সেনের মতো অভিনেত্রীরা তাতে পা মিলিয়েছিলেন। কলকাতাই হয়ে উঠেছিল অ্যান্টি ফেয়ারনেস ক্রিম আন্দোলনের ভরকেন্দ্র। কিন্তু তারপরও কি প্রত্যাশিত ফল মিলেছে? কৌশিকবাবু জানালেন, দশ বছর নিরন্তর আন্দোলন চালানোর পর ২০১৬ সালের ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর রীতিমতো গেজেট নোটিফিকেশন করে যাবতীয় স্টেরয়েড যুক্ত ক্রিমকে সিডিউল এইচ—এর অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু আজও বাগে আনা যায়নি ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবহার। ২০১৫ সালে ১৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে স্টেরয়েড ক্রিম। যার ৬০—৮০ শতাংশই প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয়েছে।
স্টেরয়েড ক্রিমের ব্যবসা এখন বেড়ে প্রায় ২২০০ কোটি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাই পল্লবীর ২ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনী অফার ফিরিয়ে দেওয়ার খবরকে নিজেদের জয় হিসাবেই দেখছেন কৌশিকবাবুরা। তাঁদের মত, যদি সত্যি ফেয়ারনেস ক্রিম মাখিয়ে কাউকে ফর্সা করা যেত তাহলে ম্যান্ডেলা, পেলে বা ওবামা, মার্টিন লুথার কিং এর মত শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা ইচ্ছা করলে রাতারাতি ভোল বদলে ফেলতে পারতেন!
ড্রাগ এবং কসমেটিক অ্যাক্টের শিডিউল জে, ক্লজ ১৮তে আছে যে, ফর্সা করার দাবি জানিয়ে কোনো ওষুধ বিক্রি করা দূরের কথা বিজ্ঞাপন দেওয়াও যায় না! কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অভিষেক দে জানান, অনেক বড় অভিনেতা–অভিনেত্রী ফেয়ারনেস ক্রিমের প্রচার করছেন। মানুষের মনে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, ফর্সা না হলে জীবনে পিছিয়ে পড়তে হবে। ভাল চাকরি পাবে না। বিয়ে হবে না। এর সামাজিক প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এই পরিস্থিতিতে সাই পল্লবীর পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য।
অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ দিশা দেখিয়েছিলেন কয়েক বছর আগেই। শুরু হয়েছিল, ‘স্টে ডার্ক, স্টে বিউটিফুল’ আন্দোলনের৷ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান কঙ্গনা রানাওয়াত৷ এবার সাই পল্লবীর এই সচেতন, সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়ে নিল কলকাতার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.