অর্ণব আইচ: রাতে কলকাতার আকাশে সন্দেহজনক ড্রোন ঘিরে রয়েই গেল রহস্য। এমনও প্রশ্ন উঠেছে, এগুলি ড্রোন না কি, অজানা কোনও উড়ন্ত বস্তু? যদিও সাতটি এহেন উড়ন্ত বস্তুর যে ভিডিও কলকাতা পুলিশের হাতে এসেছে, তা পরীক্ষা করে বস্তুগুলি ড্রোন বলেই ধারণা গোয়েন্দা পুলিশের। সেগুলি হেস্টিংস ও ময়দান এলাকায় সেনাদের ফোর্ট উইলিয়াম লাগোয়া ‘রেড জোনে’ কীভাবে উড়ল, ড্রোনের সাহায্যে কোনও গুপ্তচরবৃত্তি হচ্ছিল কি না, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই ক্ষেত্রে ড্রোনগুলি কারা ছেড়েছে ও কারা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে রয়ে গিয়েছে রহস্য।
যদিও সূত্রের খবর, এটি কোনও বাহিনী বা গোয়েন্দা দপ্তরের ড্রোন নিয়ে মহড়া হওয়া সম্ভব। সেই ক্ষেত্রেও সোমবার রাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, কলকাতা পুলিশ ড্রোনের উপর নজরদারির ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয়। তবে পাকিস্তানে ভারতের প্রত্যাঘাতের আবহে সোমবার রাতে অন্ধকারের মধ্যে বন্দর এলাকা থেকে চৌরঙ্গি ও আরও পূর্ব এবং উত্তর দিকে ‘পালিয়ে যাওয়া’ অজানা ড্রোনের কার্যকলাপ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তাই সেগুলি দেশবিরোধী কোনও শক্তির কি না, সেই তথ্যও পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। বুধবার ইস্টার্ন কম্যান্ডের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশু তিওয়ারি জানান, রাতে ড্রোন দৃষ্টিগোচর সংক্রান্ত রিপোর্ট সেনাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি তদন্তের আওতায় রয়েছে। তবে কোনও অনুমতি নিয়ে যে ড্রোনগুলি ওড়ানো হয়নি, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত সেনা ও পুলিশ।
এদিন লালবাজারের এক কর্তা জানান, সোমবার রাত ন’টা থেকে দশটার মধ্যে সাতটি ড্রোন দেখা যায়। বিষয়টি প্রথমে বন্দর এলাকায় কলকাতা পুলিশের নজরে আসে। বন্দর এলাকা থেকে সেগুলি চলে আসে হেস্টিংস ও তার পর ময়দান এলাকায়। ফোর্ট উইলিয়ামের চত্বরের উপর ড্রোনগুলি যায়নি। রাতের অন্ধকারে একসঙ্গে এতগুলি ড্রোন উড়তে দেখে প্রথমে দক্ষিণ বন্দর থানা ও তার পর হেস্টিংস থানা ও ক্রমে ময়দান থানার পুলিশ লালবাজারের কন্ট্রোলরুমকে সতর্ক করে। হেস্টিংস থানা ও ময়দান থানার পক্ষ থেকে বিষয়টি সেনাবাহিনীকেও জানানো হয়। লালবাজারের পক্ষ থেকে কলকাতার প্রত্যেকটি থানা ও গোয়েন্দা বিভাগ, এসটিএফকে সতর্ক করা হয়। এর মধে্যই টহলরত পুলিশ আধিকারিকরা ড্রোনগুলির ভিডিওগ্রাফি করতে শুরু করেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উপর দিয়ে গিয়ে ড্রোনগুলি জওহরলাল নেহেরু রোডের উপর দ্য ৪২, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের কাছে উড়তে থাকে। ওই পর্যন্ত সেগুলি খালি চোখে দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু তার পর পাঁচটি পূর্ব দিকে ও বাকি দু’টি উত্তরদিকে চলে যায়। পুলিশ সেগুলির দৃশ্যমানতা হারিয়ে ফেলে। এখানেই সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।
কারণ, কোথা থেকে একসঙ্গে এতগুলি ড্রোন কারা উড়িয়েছে ও সেগুলি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে নেমেছে, সেই উত্তর এখনও পুলিশ পায়নি। ড্রোনগুলি আকাশপথে যতটা বিচরণ করেছে, তার জন্য সেগুলির জোরালো ব্যাটারিও প্রয়োজন। এই ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে পুলিশ তদন্ত করছে। তবে ড্রোনগুলি যে আকাশপথে ভিডিও তুলছিল, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত। তাই অন্ধকারে লুকিয়ে চরবৃত্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, এতগুলি ড্রোন একসঙ্গে উড়িয়ে শুধু শখ মেটাতে রাতের কলকাতার ছবি তোলা হচ্ছিল, সেরকম সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে পুলিশের অভিমত। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, এবার থেকে পুলিশের পক্ষেও রাতের অন্ধকারে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি করা হতে পারে। এই ড্রোনগুলির মালিকানা কাদের, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.