বেহাল পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন। ছবি- কৌশিক দত্ত
নব্যেন্দু হাজরা: প্রথমদিনের ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল নজরুল স্টেশনের ছাউনি। আর তার পরের যে দুদিন বৃষ্টি হল, দুদিনই বানভাসি হয়ে গেল পার্ক স্ট্রিট স্টেশন। সোমবার তো এমন অবস্থা হল যে, লাইনে জল চলে আসায় প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হল মেট্রো পরিষেবা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবু যে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়নি এটাই রক্ষা। কারণ মেট্রোর তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ থাকে। ঠিক সময় তা বন্ধ করা হয়েছিল বলে রক্ষে। না হলে বড় বিপদ ঘটতে পারত। আর স্বাভাবিকভাবেই গত তিন দিনের ঝড়বৃষ্টিতে যেভাবে মেট্রোর কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়েছে তাতে পাতালপথে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অনেকেই বলছেন হাওড়া থেকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো গঙ্গার তলা দিয়ে চালু হওয়ার পর সেটার দিকেই সব দৃষ্টি পড়েছে কর্তাদের। এখন কার্যত ‘দুয়োরানি’ হয়ে গিয়েছে কলকাতা মেট্রো। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী অপ্রতুল। যে কারণেই প্রায় দিনই দেখা যায়, সিগন্যালে সমস্যা, কখনও রেকে সমস্যা, আর তাতেই বিপত্তি ঘটে যাত্রী পরিষেবায়। যেমনটা মঙ্গলবার সন্ধেবেলাও দেখা গেল গিরিশ পার্ক স্টেশনে। ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ না হওয়ায় দমদমগামী ট্রেন চলাচল বেশ কিছুক্ষণ ব্যাহত হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রোড শো শেষ হওয়ার পর বহু মানুষ গিরিশ পার্ক স্টেশন থেকে মেট্রো ধরেন। ফলে অত্যধিক ভিড় হয়ে যায়। একদিকে সেই সময় ছিল অফিস যাত্রীদের ভিড়। তার উপর বাড়তি এই সভা ভাঙা মানুষের ভিড়ে মেট্রোয় উপচে পড়ে যাত্রী। পরপর কতগুলো মেট্রো বেশ কিছুক্ষণ বাড়তি সময় দাঁড়ায় স্টেশনে। ফলে পরিষেবা সাময়িক বিঘ্নিত হয়।
এদিকে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে জল জমার ঘটনা নিয়ে মেট্রোয় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। কলকাতা পুরসভাকে গোটা সমস্যার কথাটা জানানো হয়েছে। পুরসভার সঙ্গে এ বিষয়ে শীঘ্রই বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “এটা দায় চাপানোর ব্যাপার না। আমরা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করব। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে জল জমুক, এটা কেউ চায় না।”
তবে গাফিলতি যারই থাকুক যেভাবে সোমবার সকালে বানভাসি হয়ে উঠেছিল পার্ক স্ট্রিট স্টেশন, তাতে মেট্রোর সুনাম যে বেশ খানিকটা ক্ষুণ্ণই হয়েছে তা মানছেন কর্তারাই। যাত্রীদের বক্তব্য, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হলে অবশ্যই এই ত্রুটি ধরা পড়ত। এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হত না মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের জলের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে সব মহলে।
নেটিজেনরা বিদ্রুপ করে বলতে থাকেন, “এ যে সমুদ্র।” কেউ কেউ লেখেন, “গঙ্গার জল যেন পার্ক স্ট্রিট চলে এসেছে। ” বিষয়টা নজরে এসেছে কর্তৃপক্ষেরও। সূত্রের খবর, প্রত্যেক স্টেশনেই অটোমেটিক পাম্প রক্ষণাবেক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মেট্রো কর্তাদেরই একাংশের দাবি, কর্মীর অভাবে এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব দেখা দিয়েছে। শুধু স্টেশনই নয়, সবক্ষেত্রেই এক অবস্থা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.