গৌতম ব্রহ্ম: স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতেই বাসচালক চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘গোপালনগর গোপালনগর।’ একটু থেমে বললেন, ‘দাদারা নামার আগে দয়া করে ভাড়াটা আমায় দিয়ে যাবেন।’ গোপালনগর, জাজ কোর্ট, ভবানীভবন-সমস্ত স্টপেই এক ব্যাপার। যাত্রীরা নামছেন। নামার আগে ড্রাইভারের সিটের কাছে গিয়ে খুচরোয় ন্যায্য ভাড়া গুঁজে দিচ্ছেন হাত বাড়ানো চালকের হাতে।
বুধবার দুপুরে এমনই এমনই দৃশ্য দেখা গেল ভিড়ে ঠাসা এক বেসরকারি বাসে। স্বাভাবিক। কারণ, সে বাসের কন্ডাক্টর নেই। চালকই দ্বৈত ভূমিকায়। যাত্রীরাও তাঁকে যারপরনাই সহযোগিতা করেছেন বলে জানালেন ধর্মতলাগামী ৮০বি রুটের বাসটির চালক স্বপন ঘোষ।
কিন্তু এমনটা কেন? মোটামুটি ফাঁকা বাস হাজরা পৌঁছতেই ভিড়ে টইটম্বুর। যানজটে পথের গতি শামুকের মতো। বাস থামতেই কন্ডাক্টর হয়ে যাচ্ছেন মাঝবয়সি চালক। ভাড়া আদায় করে ফের বাস ছাড়তে সময় লাগলেও যাত্রীরা বিশেষ গায়ে মাখছেন না। গোপালনগরে নামার আগে কোনওমতে ঠেলেঠুলে ওঁর কাছে গিয়ে প্রশ্নটা যখন করা হল, স্বপনবাবু একগাল হাসলেন। ‘‘আসলে দাদা কন্ডাক্টর হঠাৎ জরুরি কাজে ফেঁসে গেছে। এদিকে ট্রিপ শুরু করে দিয়েছি। এতগুলো লোককে নামিয়ে দেব? অগত্যা…।”, জানালেন স্বপনবাবু। তাঁর যুক্তি, “বাসও চলল। ভাড়াও পেলাম। প্যাসেঞ্জাররাও কেউ ভাড়া না দিয়ে নামেননি।” যদিও ‘ডব্লুবি১৯জি২২৫৭’ নম্বরের বাসটির এই বিচিত্র যাত্রায় টিকিটের কোনও বালাই ছিল না। যাত্রীরাও টিকিট না পেয়ে গাঁইগুঁই করেননি। বরং একে অপরকে বলেছেন, “ভাড়া গুনে নিতে হচ্ছে। এর উপর যদি সবাইকে টিকিটও দিতে হয়, তাহলে বাস আর চলবেই না।”
যাত্রী, চালক দু’পক্ষেরই লাভ হয়েছে। কিন্তু এটাই যদি নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়? বাস চালাতে চালাতে চালক যদি ঘাড় ঘুরিয়ে ভাড়া নেন? স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে পয়সার হিসাব কষেন? যাত্রীদের একাংশ মেনে নিয়েছেন, “এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যা হয়েছে একেবারেই ঠিক নয়। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে শাস্তির সুপারিশ করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.