ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: বাড়িতে পড়ে শ্রাদ্ধের উপকরণ। তৈরি পুরোহিত মশাইও। কিন্তু শ্রাদ্ধ করবে কে? মৃত মহিলার স্বামী ও দুই ছেলেই যে ঘাট কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাসপাতালে ভরতি। একই অবস্থা পুত্রবধূ এবং নাতিরও। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বালিগঞ্জের (Ballygunge) বামনপাড়ার বাসিন্দা মৃত গোলাপি মাহালির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানই হল না। এদিন তাঁর আত্মীয় নিক্কু মাহালি জানান, শ্রাদ্ধ করার মতো বাড়িতে কেউ নেই। তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এদিন সম্পন্ন হয়নি।
জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেলে শ্রাদ্ধানু্ষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে ঘাটের কাজ সেরে একটি মাঝারি মালবাহী গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন মাহালি পরিবার ও এলাকার পাড়ার বাসিন্দারা। এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারের উপরই মালবাহী গাড়িটি উলটে যায়। ঘটনায় গুরুতর আহত ২৯ জন। পুলিশ জানিয়েছে, অতিরিক্ত গতিতে আসা গাড়িটিতে ৩৫ জনের উপর মানুষ থাকায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। গাড়ির চালক প্রথমে ফ্লাইওভারের ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন। তারপরই গাড়িটি উলটে যায়। আরোহীরা পড়ে গেলে অনেকেরই মাথা ও মুখে গুরুতর আঘাত লাগে।
এদিকে, মাহালি পরিবারের লোকেরা জানান, গোলাপী মাহালির শ্রাদ্ধের জন্য বাবুঘাটে পরিবারের সদস্যরা গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় আহত হন তাঁরা। স্বামী জয়নাল মাহালি ও বড় ছেলে ষষ্ঠী মাহালি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও, ছোট ছেলে শম্ভু ও বড় ছেলে ষষ্ঠী মাহালির স্ত্রী স্বপ্নার অবস্থা আশঙ্কাজনক। শম্ভু ও স্বপ্নাকে বার বার রক্ত দিতে হয়েছে। এছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতলে ভর্তি রয়েছেন ওই পাড়ার বাসিন্দা রণজিৎ রায়, বর্ধমান থেকে আসা পরিবারের সদস্য বুলবুলি খোরা, রিনা মাহালি। এছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য সুরেশ মাহালি, সমীর মাহালি, দীনেশ মাহালিও হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন। জয়লাল মাহালির নাতির দু’টি হাত ভেঙেছে। বুধবার যাঁরা গাড়িটিতে ছিলেন, তাঁরা চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
মাহালি পরিবারের আত্মীয় মঞ্জু মাহাতো জানান, ‘‘বুধবার ফ্লাইওভারে ওঠার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়িটা হঠাৎ উলটে গেল। আমরা এদিক–ওদিক ছিটকে পড়লাম। কিছুক্ষণের জন্য চোখের সামনে ধোঁয়াশা দেখছিলাম। যখন হুঁশ ফিরল তখন দেখতে পেলাম, গাড়িটা উলটে পড়ে রয়েছে। আমরা রাস্তার উপর পড়ে রয়েছি। সবার শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমি নিজে হার্টের রোগী। কীভাবে যে বেঁচে গেলাম, বুঝতে পারছি না। বেঁচে গেলেও সবাই এখনও আতঙ্কিত।’’ নিক্কু মাহালি জানান, বুধবার বাড়িতে আসার পর খাওয়া–দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই খাবার আর কারও মুখে তোলা হয়নি। শ্রাদ্ধের জন্য সব রকম আয়োজন করা হয়। কিন্তু গোলাপি মালির শ্রাদ্ধ কবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.