সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সামনে যে কঠিনতর সময় আসছে, তা বেশ টের পেয়েছিল নবীন প্রজন্ম। আর প্রতিকূল সময়কে সাক্ষী করে নতুন সংগ্রাম শুরু করেছিল বামপন্থী ছাত্র, যুব সংগঠন। লড়াইটা ছিল ভুখা পেট ভরানোর। সমাজের বঞ্চিত, নিরন্ন নাগরিকদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে লকডাউনের মাঝে যাদবপুরে চালু হয়েছিল ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’। মূল মন্ত্র ছিল – ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না/ তা হবে না, তা হবে না।’ এই লক্ষ্য নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে সেঞ্চুরি পেরিয়ে গেল জনতার রান্নাঘর। রবিবার শততম দিনে খাবারের মেনুও ছিল একটু বিশেষ। এতগুলো দিন ধরে যাদবপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলের আমজনতার সাড়া পেয়ে দিন বদলের আশায় বুক বাঁধছেন কমরেডরা।
তারুণ্যের উদ্যমে কোন অসাধ্যই না সাধন হয়েছে? ইতিহাস তার সাক্ষী, যুগে যুগে, কালে কালে। করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) বিরুদ্ধে লড়াই যদি এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে লকডাউনের দিনগুলোয় রোজগারহীন অবস্থায় দিন কাটানোর সংগ্রামও খুব কম কঠিন ছিল না। এ সময়ে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাল, ডাল, হাতা, খুন্তি নিয়ে রান্নায় নেমেছিলেন বামপন্থী ছাত্র, যুবরা। আড়ালে থেকে তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছে সিপিএম।
যাদবপুরের নবনগরের ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ থেকে ধোঁয়া ওঠা ভাতের গন্ধে কেমন একটা মায়ের ছোঁয়া পেয়েছেন ভুখা মানুষগুলো। সকাল-সন্ধে লাইন দেন সেখানে। মাত্র ২০ টাকায় ভরপেট খাবার মিলছে। রান্নার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্যাকেজিং করে, তবেই খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এই রান্নাঘরে ঘুরে গিয়েছেন বাম নেতারা। সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম – তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। সত্তরোর্ধ্ব বিমান বসুকে পর্যন্ত ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’-এ রাঁধুনির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল।
রোজ এভাবে জনসেবা করতে করতেই যে কবে ১০০ দিন পার করে ফেলেছে এঁরা, হিসেব রাখেনি নিজেরাও। তবে হিসেব রেখেছে সময়। তাই তো রবিবার ইনিংসের শততম দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’-এ। রোজ ডাল,ভাত,ডিম খাওয়া মানুষগুলোর হাতে তুলে দেওয়া খাবারের প্যাকেটে এদিন ছিল বাসন্তী পোলাও, চিলি চিকেন। রান্নাঘর সূত্রে খবর, এদিন নাকি সারাদিনে প্রায় ৫০ হাজার প্যাকেট বিলি করা হয়েছে। পেটপুরে ভালমন্দ খেতে পেরেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
আসলে যাদবপুর (Jadavpur) মানেই লাল নিশান। দীর্ঘদিন ধরে এই গড় বামপন্থীদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ফাটল ধরলেও, ফের পুরনো জমি আর নতুন যোদ্ধাদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় রয়েছে সিপিএম। লকডাউনের কঠিন সময়ে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ যেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের হাতিয়ার। রবিবার যাদবপুরের নবনগরে উপস্থিত হয়ে মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্ররা সেই বার্তাই দিয়েছেন বারবার। বলতে চেয়েছেন, সিপিএম শোষিতের জন্য, শোষিতের পাশে বরাবর ছিল, আজও আছে, থাকবে ভবিষ্যতেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.