ফাইল ছবি
অভিরূপ দাস: ফের এসএসকেএমের (SSKM) সাফল্যের মুকুট নয়া পালক জুড়ল। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে (Operation) প্রাণ বাঁচল মহিলার। বাইক-অটোর মুখোমুখি ধাক্কায় অটোর রড বুক-পিঠ ফুঁড়ে ঢুকে গিয়েছিল তাঁর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহিলার ফুসফুস, লিভার। এমনকী মেরুদণ্ডের হাড় এবং সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লাগে। ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। কার্যত প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত এসএসকেএমের চিকিৎসকদের হাতযশে প্রাণ বাঁচল তাঁর। রোগীকে ‘প্রন পজিশনে’ শুইয়ে করা হয় জটিল অপারেশন।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির বাসিন্দা তুহিনা মোল্লা। সোমবার বাইকে চেপে নবমুড়ি গ্রামে বাপের বাড়ি যাচ্ছিলেন। সেই সময় বাইক-অটোর মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনায় অটোর রড তুহিনার বুকের ডান দিক দিয়ে ঢুকে পিঠের বামদিক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। তবে রডের একটা অংশ তখনও অটোর সঙ্গে আটকে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে করাত দিয়ে রড কেটে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো না থাকায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সোমবার সন্ধেয় তাঁকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভরতি করা হয়। করা হয় এক্স-রে। তাতেই দেখা যায় ফুসফুস, লিভার, সুষুম্নাকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শুরু হয় অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফুসফুসে ৪টি ছোট ছোট গর্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর রক্তপাতও হচ্ছিল। একদিকে শ্বাসকষ্ট অন্যদিকে রক্তপাত, সবমিলিয়ে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ নেন এসএসকেএম-এর চিকিৎসকরা।
কার্ডিওথোরাসিক এনডিওভাসকুলার সার্জারির অধ্যাপক চিকিৎসক ডা. শুভেন্দুশেখর মহাপাত্রর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. চৈতালি সেন, ডা. সন্দীপকুমার কর, ডা.ঋত্বিকা মজুমদার এবং ডা. রণমিতা পাল অপারেশন শুরু করেন। ভোর চারটে নাগাদ শেষ হয় অপারেশন। অস্ত্রোপচারে চার ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট লাঘব করতে প্রন পজিশনে শুইয়ে রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। সাধারণত চিৎ করে শুইয়ে অপারেশন করা হয়। এবার উলটোপথে হাঁটলেন ডাক্তাররা।
চিকিৎসক শুভেন্দুশেখর মহাপাত্র জানান, হাসপাতালে আনার আগে রাস্তায় হাত দিয়ে টেনে রড বের করা হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হত না। কারণ রাস্তাতেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হত। অপারেশন টেবিলে পুরো বিষয়টা হওয়ায় আগে থেকে রক্ত জোগার করে রাখা গিয়েছিল। রোগীর রক্তজালিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেগুলি সেলাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আরেক চিকিৎসক সন্দীপকুমার কর জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে অপারেশন শেষ হয়েছে। দুপুরেই রোগীর জ্ঞান ফেরে। তার পরেও আমরা ৪৮ ঘণ্টা আমরা অবজারভেশনে রাখছি। ফুসফুস থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না সেটাই মূলত দেখা হবে। অপারেশনের পর চারঘণ্টা রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তবে রোগীর মেরুদণ্ডের হাড়ে আঘাত লেগেছে এবং সুষুম্নাকাণ্ড গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তিনি ভবিষ্যতে আর কোনওদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.