কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: দূরত্বের হিসেবে ৩২৮ কিলোমিটার। সময়ের হিসেবে লাগবে ম্যাজিক গাড়িতে কম করে দশ ঘন্টা। টানা পথটা এক মুঠো মুড়ি কিংবা দুটো মাত্র বিস্কুট তাও জুটবে না কপালে। পকেট পুরোপুরি ফাঁকা ।
এ আর এমন কী ব্যাপার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তো পেটে এক বিন্দু দানাপানি পড়েনি এই ২৫ জনের। এঁরা ত্রিপুরা গিয়েছিলেন মালদার মানিকচক থেকে। রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে। প্রৌঢ় থেকে যুবক মিলিয়ে ২৫ জনের একটা দল। কাজে ঠিকমতো যোগ দিয়েছেন কি দেননি বজ্রাঘাতের মতো নেমে আসে লকডাউন। তারপর বেলোনিয়া স্টেশনে একটি ঘরে গাদাগাদি করে কাটিয়েছেন ৭০ দিনের বেশি। মালিক অবশ্য সংবেদনশীল। খেতে দিয়েছেন এমনকি দমদম পর্যন্ত আসার বিমান ভাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। তবে দু’দিন আগে পাওয়া টাকা সব শেষ। ফলে অনাহার।
পরিযায়ী আখ্যা পাওয়া এই শ্রমিকরা অবশেষে ফিরতে পেরেছেন নিজের রাজ্যে। এরপর ২২ হাজার টাকা ভাড়ায় দুটি ম্যাজিক গাড়িতে সুরক্ষাবিধি শিকেয় তুলে ঠাসাঠাসি করে চেপে শুক্রবার বিকেলে রওনা দিয়েছেন মালদার উদ্দেশ্যে । পৌঁছতে রাত তিনটে কি চারটে বেজে যাবে। তারপর বাড়ি গিয়ে খেতে পাবে প্রায় ৪৮ ঘন্টা অভুক্ত থাকার পর। নইম আখতার বছর কুড়ির যুবক। জানিয়েছেন, “ঘরেও যে কতটা চাল আছে তা জানি না। আমি একমাত্র রোজগেরে। আমারই তিন মাস মাইনে নেই।”
ত্রিপুরার বাসিন্দা কনভেন্ট শিক্ষিকা এক মহিলা মাসাধিককাল লকডাউনের সময় রাত কাটিয়েছেন কলকাতা স্টেশনে। মালদার শ্রমিকরা ত্রিপুরার স্টেশনের গুদামে ঘুমিয়েছেন। দাবার চাল চেলে লকডাউন কতজনের যে ঘরবদল করিয়ে দিয়েছে এই ক’মাসে তা ভাবলে বিস্ময় জাগে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.