অর্ণব দাস, বারাকপুর: মহিলা সাংবাদিকের শ্লীলতাহানির অভিযোগ মানতে নারাজ সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। বিষয়টিকে ‘পরিকল্পিত কুৎসা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ খণ্ডাতে দিয়েছেন একাধিক ‘আজব’ যুক্তিও। পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের ‘সাসপেনশন’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েও।
সোমবার বরানগর থানা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তন্ময়। রবিবারের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সেখানে ব্যাখ্যাও দেন। তাঁর কথায়, “এই রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাটিকে আমি পরিকল্পিত কুৎসা বলে মনে করেছি।” কারা আছে এর নেপথ্যে? জবাবে বাম নেতার দাবি, “কোনও রাজনৈতিক দল এর পিছনে আছে না কি দু-একজন আছেন নির্দিষ্ট করে এখনই বলা সম্ভব নয়।” নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করতে তাঁর যুক্তি, “ভদ্রমহিলার ওজন ৪০ কেজির বেশি নয়। আমার ওজন ৮৩ কেজি। ৮৩ কেজি ওজনের এক জন পুরুষ মানুষ যদি ৪০ কেজি ওজনের এক মহিলার কোলে বসে পড়েন, তা হলে সেই মহিলা শারীরিকভাবে ফিট থাকে কি না, আমি জানি না।” এ বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ঘড়ি ধরে ঘটনার ব্যাখ্যা করেন। একই সঙ্গে একাধিক প্রশ্নও তোলেন।
তন্ময়ের দাবি, “ভদ্রমহিলা আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে। আমার পাশের বাড়ির এক যুবক আমায় রাতে জানিয়েছে যে, মেয়েটি হাসতে হাসতেই বাড়ি থেকে বেরচ্ছিলেন। মেয়েটি ফেসবুক লাইভে বলেছেন যে, উনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমার বক্তব্য হল, যে সময়ে ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে, তার পরে মেয়েটি প্রায় ২৫ মিনিট আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েটির সল্টলেক যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল। ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যেও কথা হয়েছে। আমি ওঁকে একটা প্রশ্নও সাজেস্ট করে দিয়েছিলাম। যিনি এতটা ট্রমাটাইজড হয়ে রয়েছেন, তাঁর পক্ষে কি এত কাজ করা সম্ভব?” অভিযোগ ‘লঘু’ করতে বরানগরের উপনির্বাচনে প্রার্থীর আরও প্রশ্ন, “মহিলা সাংবাদিকের ক্যামেরা পার্সন ঘটনাটা কেন রেকর্ড করল না? ক্যামেরা পার্সন প্রতিবাদ করল না কেন? মেয়েটি চিৎকার করল না কেন? বরানগর থানায় অভিযোগ করল না কেন?” মঙ্গলবার ফের তন্ময়কে বরানগর থানায় তলব করা হয়েছে।
রবিবার মহিলা সাংবাদিক ফেসবুক লাইভ করে অভিযোগ জানানোর পরই বাম নেতাকে সিপিএম থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েও ‘ক্ষুব্ধ’ তন্ময়। বলেন, “পার্টির অভ্যন্তরের ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি আছে। যে কোনও অভিযোগ এই কমিটির কাছে যায়। তার পর কমিটি তদন্ত করে। এক্ষেত্রে মহম্মদ সেলিম প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘটনা ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটিতে পাঠানোর কথা বলেন। এই প্রস্তাবে আমি সহমত। তাই আমার প্রত্যাশা ছিল এই কমিটি আমার কাছে জিজ্ঞাসা করা -সহ যা যা প্রক্রিয়া আছে করবে। তার আগেই প্রচার শুরু হয় আমি সাসপেন্ড। এই সাসপেন্ডেড জানাটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক, আমি মর্মাহত। আমি মনে করি ন্যূনতম তদন্ত করা উচিত ছিল, আমার বক্তব্য জানা উচিত ছিল।”
এ বিষয়ে পালটা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর গ্রেপ্তারির দাবি করে তৃণমূল নেতা বলেন, অন্যসময় তো সিপিএমের এই সমস্ত নেতারা অনেক কথা বলেন। এক্ষেত্রে কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে না? যা বলার আদালতে বলবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.