ফাইল ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: নিয়োগ মামলার জটিল জট খুলতে এবার মামলাকারী ও রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন, তাঁদের নিয়োগের বন্দোবস্ত করাই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ওই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উঠে আসা প্রস্তাব জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে মামলারই অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর হয়ে সওয়াল করার জন্য রাজ্যের মুখ্য আইনি উপদেষ্টা তথা অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আগামিদিনে তাঁর এজলাসে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের হয়ে আর সওয়াল করতে পারবেন না বলেও এদিন জানিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তঁার পরিবর্তে রাজ্যের তরফে অন্য আইনজীবী সওয়াল করবেন।
বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত রমেশ মালিক ও সৌমেন নন্দীর আনা দুটি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। বিচারপতি এই নিয়োগ জটিলতার সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চান। রাজ্যের কৌঁসুলি শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পদ শূন্য না হলে কেউ নতুন করে নিয়োগ হতে পারবেন না। এর আগে সুপার নিউমারারি পোস্ট তিন হাজার করা হয়েছিল।’’
তাঁর দাবি, ‘‘শূন্যপদ না থাকলে রাজ্য নিয়োগ করতে বা বিনা অবসরে কাউকে সরিয়ে দিতে পারে না। তাই শূন্যপদের সংস্থানের জন্য সুপার নিউমারারি পোস্ট সৃষ্টি করা হয়। যাতে কোনও আইনত বাধা ছিল না। কিন্তু মামলার জেরে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।” সংশয় প্রকাশ করে আদালত জানিয়েছে, অতিরিক্ত শূন্যপদের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে না। বয়সের ঊর্ধ্বসীমার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া সম্ভব কি না সেটা বিবেচনা করে দেখা দরকার। এদিন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়া উচিত। সেটাই প্রকাশিত হচ্ছে না। বাকিদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
তার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আর কত অপেক্ষা? এই অপেক্ষা শেষ হওয়ার নয়। আন্দোলনকারীরা অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন, তদন্ত তদন্তের মতো চলছে। ঠিক কবে এই তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে কেউ জানে না। কিন্তু এর মধ্যে চাকরি প্রার্থীদের বয়স বেড়ে যাবে। তাই এই নিয়োগের জট খোলা দরকার। নতুন করে টেট হয়েছে, আরও যোগ্য প্রার্থী আসবেন। এই সব নিয়মিত করার জন্য কিছু করা দরকার।’’
এদিকে এদিনও নিয়োগ বেনিয়ম নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে রাজ্যের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাদের অবস্থানে অনড়। তারা এই ব্যাপক অনিয়মের কথা মানতে রাজি নয়। শুধুমাত্র ৯৪ জনের অনিয়মের কথা বলেই তারা থেমে যাচ্ছে। তার প্রেক্ষিতে আদালত জানায়, রাজ্য এবং মামলাকারীরা আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করুক। অন্যদিকে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের হয়ে এখনও মামলা লড়ছেন।
মামলার শুনানি চলাকালীন এদিন কিশোর দত্তকে তলব করে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আমি শুনেছি যে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এই দুর্নীতির মামলায় কোনও এক অভিযুক্তের আইনজীবী হিসাবে মামলা লড়ছেন। যদি এটা হয়, তাহলে সরাসরি একটা স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এই জন্য আমি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে ডেকে পাঠিয়েছি।’’ আদালতে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, তিনি এখনও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর আইনজীবী হিসাবে মামলা করছেন। তার প্রেক্ষিতে আদালত জানিয়ে দেয়, ‘‘তাহলে আপনি এই মামলায় রাজ্যের আইনজীবী হিসাবে মামলা লড়তে পারবেন না। কারণ সুবিচার
শুধু করলেই হবে না, মানুষকে সেটা অনুভবও করতে হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.