অর্ণব আইচ: ফের শহরে তুবড়ি ফেটে পর পর বিপদ। ফেটে যাওয়া তুবড়ির খোল মাথায় লেগে আহত হলেন এক প্রৌঢ়। এর ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই বড় তুবড়ি ফাটাতে গিয়ে উড়ে গেল এক কিশোরের হাত। মঙ্গলবার রাতে দু’টি ঘটনাই ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট এলাকায়। আহত দু’জনকেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে প্রথম ঘটনাটি ঘটে কালীঘাটের সদানন্দ রোডে। রাত প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেল করে যাচ্ছিলেন ৫৮ বছর বয়সের ভবতোষ রায়চৌধুরি। প্রৌঢ়ের বাড়ি একবালপুর এলাকার ময়ূরভঞ্জ রোডে। সদানন্দ রোড ধরে সাইকেল করে যাচ্ছিলেন তিনি। তপন থিয়েটারের অদূরে কয়েকজন যুবক তুবড়ি ফাটাচ্ছিলেন। তাঁর সামনে হঠাৎই একটি তুবড়িতে আগুন ধরানো হয়। তিনি তুবড়ির কাছে চলে আসেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হঠাৎই তুবড়িটি ফেটে যায়। তুবড়ির শক্ত খোলের অংশ ছুটে এসে তাঁর মাথায় লাগে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় সাইকেল থেকে পড়ে যান। যদিও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, আগুনের ফুলকি ছিটকে এসে তাঁর মাথায় লাগার ফলেই তিনি আহত হন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের পক্ষে তাঁর বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়।
পরের ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। কালীঘাট রোড ধরে যাচ্ছিল ওই এলাকারই একটি নামী পুজো কমিটির কালীপুজোর শোভাযাত্রা। তাতে শামিল হন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। শোভাযাত্রায় ফাটানো হচ্ছিল বিভিন্ন রকমের বাজি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে ছিল ১৭ বছরের কিশোর বাবুসোনা নায়েক। কালীঘাট রোডেরই বাসিন্দা সে। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, ওই কিশোর একটি বড় মাপের তুবড়ি ফাটানোর চেষ্টা করছিল। তখনই তুবড়িটি ফেটে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় তার হাতের চারটি আঙুল উড়ে গিয়েছে। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তার বাঁ হাতের কবজি থেকেই উড়ে গিয়েছে হাতের অংশ। আহত বাবুসোনার মামা মিঠুন ঘরামি জানান, বাবুসোনা নিজের বাজি ফাটাচ্ছিল না। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কেউ ওই বাজিতে আগুন ধরিয়েছিলেন। কিন্তু বাজিটি ফাটেনি। তখন বাবুসোনা রাস্তার একপাশে পড়ে থাকা তুবড়িটি নিয়ে নাড়াচাড়া করে ফাটানোর চেষ্টা করে। তখনই বাজিটি ফেটে যায়।
তুবড়ি ফেটে এই ঘটনার জেরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এলাকার বাসিন্দারা তার চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছিল তার বাঁ হাত। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোররাতে তার অস্ত্রোপচার হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেই তার বাবার মৃতু্য হয়েছে। তার পর সে-ই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে পরিবারের হাল ধরে। তার বাড়িতে রয়েছেন মা আরাধনা নায়েক ও বোন। বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী। নিজে কাজ করে বোনকে পড়ায় বাবুসোনা। এই দুর্ঘটনার পর ভেঙে পড়েছেন মা ও বোন। তাঁদের প্রশ্ন, উড়ে যাওয়া এই হাত নিয়ে কীভাবে কাজ করবে বাবুসোনা। তুবড়ি ফেটে আহত হওয়ার এই দু’টি ঘটনারই তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.