সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই ’, এই প্রবাদবাক্যকে বিশ্বাস করে গোয়েন্দাগিরিকে সর্বদাই পছন্দ করে এসেছে আম বাঙালি। তাই বাংলা সাহিত্যে ছড়িয়ে রয়েছে ফেলুদা থেকে শুরু করে ব্যোমকেশ, কিরীটিরা। তবে মগজাস্ত্রে শান দিতে দিতে প্রগতিশীল বাঙালি সমাজ বুদ্ধির গোড়ায় কি একটু বেশি সার দিয়ে ফেলছেন? এই প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে সাম্প্রতিক মেট্রোর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে।
রাতের মেট্রোতে এক জোড়া যুগল আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়েছিলেন। তা দেখে সহ্য করতে পারেননি একদল ‘দাদু’। প্রথমে কথা কাটাকাটি, তারপরে মেট্রো থেকে নামিয়ে কার্যত গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল ওই যুগলকে। এরপর থেকেই নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। দাদু থেকে ‘মারকুটে দাদু’তে পরিণত হওয়া সেই সমস্ত দাদুদের খোঁজে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পড়তে শুরু করেছে বড়বড় পোস্ট, চলতে থাকে খোঁজ। সিবিআই, সিআইডি চেয়েও অনেক অতিদ্রুত ‘তথাকথিত’ অভিযুক্তদের প্রোফাইলের খোঁজ বের করে ফেলেছেন ফেসবুক গোয়েন্দারা। ঝড় উঠেছে লাইক-শেয়ার-কমেন্টের, ট্রেন্ডিং হচ্ছে #HokAlingon। এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে। নীতি পুলিশি কোনও মতেই বরদাস্ত করা যায় না। মেট্রোতে আলিঙ্গন করা যাবে না একথা কোথাও লেখা নেই। নেহাত ঝোঁকের বসে গণধোলাই কোনও মতেই সমর্থণযোগ্য নয়। কিন্তু এরপরেও উঠছে প্রশ্ন।
মেট্রো কাণ্ডে জড়িতদের ফেসবুক প্রফাইলের লিঙ্ক এখন জেন-ওয়াইয়ের ওয়ালে ওয়ালে শেয়ার হচ্ছে। তবে সেই প্রোফাইলগুলি কি আদৌ সত্যি রয়েছে, নাকি অনেকটাই ফেক! এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। গণধোলাইয়ের যে ছবিগুলি ভাইরাল হয়েছে তাতে অভিযুক্তদের মুখ অনেকটাই অস্পষ্ট। এই ছবিগুলিকে প্রমাণ ধরে ফেসবুকে অভিযুক্তদের যে প্রোফাইলগুলি ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে তারও বাস্তবতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে।
উদাহরণ দিলেই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। মেট্রো কাণ্ডে ফেসবুকে প্রকাশিত একজন ব্যক্তিদের নাম কোথাও রয়েছে প্রণব চৌধুরি, তো কোথাও প্রণব মুখার্জি। কিন্তু ছবি সবক্ষেত্রেই এক। একটা নয়, এই ব্যক্তির নামে ইতিমধ্যেই ফেসবুকে জ্বলজ্বল করছে চার চারটি প্রোফাইল। অভিযুক্ত হিসাবে অন্য একজন ব্যক্তির পরিচিত এক আত্মীয় নিজের ফেসবুকে লিখেছেন যে, মেট্রোর ঘটনায় তাঁর শ্বশুরের ছবি ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনা অসত্য। সেদিন তাঁর শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে উত্তরপাড়া থানায় তারা অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও ফেসবুকে জানিয়েছেন ওই মহিলা।
দেবতনু ভট্টাচার্য বলে অপর এক ব্যক্তির ছবিও মেট্রো কাণ্ডে অভিযুক্তদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন ঘটনার সময় তিনি ওই স্থানে ছিলেনই না। কেবলমাত্র কোনও এক পত্রিকায় নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
যুগল হেনস্তা কাণ্ডে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ও সিঁথি থানা। তবে একটা প্রশ্ন উঠছে, যাদের জন্য এত প্রতিবাদ সেই যুগল কোথায়? তাঁরা তো কোনও দোষ করেননি, তবে কেন প্রকাশ্যে এসে প্রতিবাদে গলা মেলাচ্ছেন না? কেই বা প্রকাশ্যে এসে গলা চড়াচ্ছেন না নীতি পুলিশি ফলানো ওই সমস্ত মারকুটে দাদুদের বিরুদ্ধে?
মেট্রোতে যেভাবে যুগলকে গণপ্রহার করা হয়েছে তা কোনও যুক্তিতেই সমর্থণযোগ্য নয়। তবে এটাও বলতে হয় কোথাও গিয়ে কি শহর কলকাতা ছাই উড়িয়ে দেখতে ভুলে যাচ্ছে? রহস্য-রোমাঞ্চ প্রিয় বাঙালি কোথাও গিয়ে কি ভুলে যাচ্ছে সত্যের অনুসন্ধান করা? ছাই উড়িয়ে না দেখে, কেন স্রোতের সঙ্গে ভাসছে বাঙালি? প্রশ্নটা উঠছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.