অর্ণব আইচ: ঐরাবতের পেটের ভিতর থাকে ট্যাংক। থাকে বড়সড় হেলিকপ্টারও। সমুদ্রের পাড়ের কাছে এসেই ভিতর থেকে ‘উগরে’ দেয় যুদ্ধের ট্যাংক আর সেনাদের। কম যায় না ‘কোরা’ও। সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় একের পর এক কামান থেকে শত্রুপক্ষের দিকে ছুড়তে পারে মিসাইল।
এবার ‘ঐরাবত’ আর ‘কোরা’কে দেখতে পাবেন কলকাতার বাসিন্দারা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতায় এল এই দুই যুদ্ধজাহাজ। চলতি সপ্তাহেই চারদিনের জন্য কলকাতা বন্দরে থাকছে এই যুদ্ধজাহাজ দু’টি। এই বছর ‘স্বর্ণিম বিজয়বর্ষ’ উপলক্ষে সেনাবাহিনী একটি সাবমেরিন কলকাতায় আনার ব্যাপারেও উদ্যোগ নিয়েছিল। যদিও নৌসেনার এক কর্তা জানান, গঙ্গার গভীরতা সাবমেরিনের পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাই সাবমেরিন কলকাতায় নিয়ে আসা কঠিন। সেই ক্ষেত্রে কয়েকটি ধরনের যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আসা সহজ নৌসেনার পক্ষে। নৌসেনার এক কর্তা জানান, এখনও করোনা বিদায় নেয়নি। যুদ্ধজাহাজে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলে নৌবাহিনীর পক্ষে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। মাঝসমুদ্রে ভেসে চলা অবস্থায় করোনার সঙ্গে লড়াই করা অত্যন্ত অসুবিধানজকও বটে। সেই কারণে এই বছর কলকাতায় দুই যুদ্ধজাহাজ এলেও করোনা পরিস্থিতি না কাটার ফলে আমজনতাকে জাহাজে উঠতে দিতে চায় না নৌসেনা। এর আগেও বেশ কয়েকবার যুদ্ধজাহাজ এসেছে কলকাতায়। তখন পরিচয়পত্র দেখিয়ে সাধারণ মানুষ যুদ্ধজাহাজে উঠেছেন। কিন্তু কোনওরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় নৌসেনা। তাই নৌসেনার কর্তারা চাইছেন, সবাইকে যুদ্ধজাহাজের উপর ওঠানো সম্ভব না হলেও কোভিড রীতি মেনে স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যেন যুদ্ধজাহাজ দেখতে আসেন। কারণ, স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই পরবর্তীকালে যোগ দিতে পারেন নৌবাহিনীতে। এই ব্যাপারে কয়েকটি কলেজ ও স্কুলের সঙ্গে নৌসেনার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিশেষ কিছু পেশা ও সরকারি সংস্থার মানুষ উঠতে পারবেন বন্দরে নোঙর করে থাকা দুই যুদ্ধজাহাজে।
কলকাতায় নৌসেনা কর্তা সুদীপ্ত মৈত্র জানান, উপকূলবর্তী এলাকায় যুদ্ধের জন্য ‘ঐরাবত’ নামে এই যুদ্ধজাহাজটি সেনাবাহিনীর পক্ষেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধজাহাজটি ট্যাংক বহনকারী। বড় হেলিকপ্টারও বহন করতে পারে এই জাহাজ। এ ছাড়াও ভিতরে থাকতে পারে একাধিক কোম্পানি সেনা। এই জাহাজ মূলত ‘ল্যান্ডিং শিপ’ নামেই পরিচিত। কারণ, এই জাহাজ নেমে সমুদ্র উপকূল তথা সৈকতে সরাসরি নেমে যেতে পারে যুদ্ধের ট্যাংক। তার সঙ্গে সেনাবাহিনীও। শত্রুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ সেরে ফের ওই যুদ্ধজাহাজে করেই সেনারা ফিরে আসতে পারে নিজেদের অঞ্চলে।
এদিকে, অন্য যুদ্ধজাহাজ ‘কোরা’য় মোতায়েন হওয়া নৌসেনারা যুদ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত। এই যুদ্ধজাহাজে রয়েছে ১৬টি কামান, যা থেকে ছোঁড়া যায় মিসাইল। যুদ্ধজাহাজ থেকে শত্রুপক্ষের জলযান অথবা বিমান ধ্বংস করা যায়। এ ছাড়াও যুদ্ধের জন্য ওই জাহাজের বিভিন্ন কোণে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক, যা দিয়ে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব। শত্রুপক্ষের জাহাজ বা সাবমেরিনের উপর একাধিক বৈদ্যুতিন যন্ত্রের মদতে নজরদারি করা যায় প্রতিপক্ষের রণতরীর উপর। এই যুদ্ধজাহাজের ভিতর ছোট হেলিকপ্টারও রাখা যায়। প্রয়োজনে এই যুদ্ধজাহাজ থেকে হেলিকপ্টার সমুদ্রে উদ্ধারকাজও চালাতে পারে বলে জানিয়েছে নৌসেনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.