রিংকি দাস ভট্টাচার্য: রাজ্য সরকারি কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত সমস্ত খতিয়ান সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত করতে চালু হচ্ছে অনলাইন ই-সার্ভিস বুক। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে রাজ্য সরকারের সমস্ত কাজই এখন অনলাইনে হয়ে থাকে। সার্ভিস বুকের ক্ষেত্রেও পুরনো মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি বদলে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যে কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ই-গভর্ন্যান্স দপ্তর চালু করেন। এবার ই-সার্ভিস বুক চালু হলে এক নিমেষেই কোনও কর্মীর সমস্ত তথ্য জানা যাবে। ফলে পেনশন নিয়ে বিন্দুমাত্র জটিলতা থাকবে না।
সম্প্রতি অর্থ দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই ই-সার্ভিস বুক চালুর কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের অধীনস্ত সমস্ত দপ্তর এবং সংস্থাকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ফিজিক্যাল সার্ভিস বুকগুলো আপডেট করতে। অনলাইন ই-সার্ভিস বুক সফলভাবে শুরু করার জন্য এই আপডেটেড সার্ভিস বুকগুলো কর্মীদের মধ্যে ইস্যু করতে হবে। এরপর, লিগ্যাসি ডিটেল আপডেট হয়ে গেলে, এই ফিজিক্যাল সার্ভিস বুকগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে। বস্তুত, রাজ্য সরকারি কর্মীদের পেনশন, পদোন্নতি-সহ হাজারো বিষয়ে সবচেয়ে জরুরি হল সার্ভিস বুক। যেখানে প্রত্যেক সরকারি কর্মীর যাবতীয় ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে ঘটা সমস্ত ঘটনাবলী লিখিতভাবে সংরক্ষিত হয়।
অভিযোগ, দীর্ঘদিন কাজ করা কর্মীদের অনেকক্ষেত্রে সেই সার্ভিস বুক ছিঁড়ে যেত কিংবা হারিয়ে যেত। সেক্ষেত্রে ওই কর্মীর আর্থিক পাওনাগণ্ডা, মামলা সংক্রান্ত সমস্যা-সহ হাজারো জটিলতা তৈরি হত। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাজ্য সরকার প্রত্যেক কর্মীর জন্য উন্নত সংস্করণ হিসেবে ই-সার্ভিস বুক তৈরির পরিকল্পনা নেয়। দপ্তর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেপারলেস অফিস তৈরির উপর জোর দেন। দিস্তা দিস্তা কাগজ ও হাজার হাজার ফাইলের পরিবর্তে ‘ই-অফিস’ তৈরির রাস্তায় হাঁটা শুরু হয়। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে অর্থ দপ্তর চালু করে ইলেকট্রনিক ফাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম। যার মাধ্যমে কম্পিউটারের একটি ক্লিকেই প্রশাসনিক কর্তারা প্রয়োজনীয় ফাইল নিমেষে খুঁজে পেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, আগে বছরের পর বছর সরকারি কোনও প্রকল্প বা কাজ আটকে থাকত। অনেক ক্ষেত্রে ফাইল হারিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যেত। তৃণমূল সরকার আসার পর সেই বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারি কর্মীদের যাবতীয় বিবরণ একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট ফরম্যাটে রাখতে নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসা হয়েছে। যার পোশাকি নাম হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইচআরএমএস)। এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করতে প্রত্যেক কর্মীর সার্ভিস বুক-কে ‘ইলেকট্রনিক ভার্সান‘ দেওয়ার নয়া উদ্যোগ শুরু হয়। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। এই সংগঠনের মেন্টর গ্রুপের কনভেনর মনোজ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আগে সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যার হিসাব করতে গিয়ে ধন্দে পড়ে যেত পে কমিশনও। কিন্তু, এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় সমস্ত রেকর্ড থাকবে সরকারি কর্মচারীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.