অভিরূপ দাস: লাগামছাড়া নয়। টেস্টের খরচ যেন হয় আমজনতার সাধ্যের মধ্যে। ডেঙ্গু পরীক্ষার খরচে রাশ টানতে এবার স্বাস্থ্যভবনের আতসকাচের তলায় শহরের একাধিক বেসরকারি ল্যাব। পুজোর মুখে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচশোরও বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, কলকাতা তো বটেই জেলাতেও ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত মারাত্মক।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ এবং দার্জিলিং ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বাধিক। এমন যখন অবস্থা এই মুহূর্তে ডেঙ্গু বিদায় নেওয়ার গতি দেখছে না স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, পুজোর অক্টোবর তো বটেই। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এডিস মশার হানা। বৃষ্টি যে বিদায় নেওয়ার নাম নেই। এদিন শহরের বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে স্বাস্থ্যদপ্তর।
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এবং স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। ডেঙ্গু চিকিৎসায় খরচে রাশ টানতে বলা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। স্বাস্থ্য ভবনের জরিপ, একাধিক হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সীমাতিরিক্ত বিল ধরানো হচ্ছে রোগীর পরিবারকে। রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মিলছে ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ।
অতি সম্প্রতি অ্যাপোলো হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা বাবদ ৮০ হাজার টাকা বিল হয়েছিল এক ব্যক্তির। তার সম্পূর্ণটাই পাওয়া গিয়েছে স্বাস্থ্যসাথীতে। তবে যদি কোনও হাসপাতাল অতিরিক্ত বিল করে থাকেন তবে স্বাস্থ্য কমিশনে আসার পরামর্শ দিয়েছেন চেয়ারম্যান। অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটাল অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাদ যায়নি ম্যালেরিয়ার প্রকোপও। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে চিকিৎসা চলবে।
এদিন প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিংহোমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু অথবা ম্যালেরিয়া নিয়ে কোনও রোগী ভরতি হলেই জানাতে হবে স্বাস্থ্যভবনকে। কীভাবে কোন পথে চিকিৎসা চলছে তা নজরে রাখবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উল্লেখ্য, সরকার একটি পোর্টাল তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ওয়েবসাইটে তা দেখতে পাওয়া যায়। ডেঙ্গু অথবা ম্যালেরিয়ার রোগী এলেই ওই পোর্টালে তা আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়ায় দু’ভাবে। ডেঙ্গু রোগীর রক্ত খাওয়ার পর মশার শরীরে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হয়। এর আট থেকে দশ দিন পর ওই মশা যদি কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তা হলে তার ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীর রক্ত খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই ওই মশা যদি সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তা হলে পাঁচ থেকে ছ’দিনের মধ্যে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। রাজ্য সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাইজা অথবা এনএসওয়ান পদ্ধতিতেই ডেঙ্গু নির্ণয়ের পরীক্ষা করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, জ্বর হলে অপেক্ষা নয়। টেস্ট করুন দ্রুত। র্যাপিড কিটে ডেঙ্গু অনেক সময় ধরা পড়ে না। এলাইজা পদ্ধতিতে সে আশঙ্কা নেই। রাজ্য সরকারের নির্দেশ, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ডেঙ্গু চিকিৎসার যে নিজস্ব প্রোটোকল রয়েছে তাই মেনে চলতে হবে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালকে। ইতিমধ্যেই খবর এসেছে, কিছু হাসপাতাল ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা করছেন রোগীদের। বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যায় টানাটানি রয়েছে। কোভিড বিদায় নেয়নি এখনও। এর মধ্যে ডেঙ্গু আরও মাথাচাড়া দিলে? স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, জেলার বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে সাহায্য চাইতে পারে স্বাস্থ্যভবনের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.