স্টাফ রিপোর্টার: এক গেট দিয়ে সুস্থ হয়ে বেরোচ্ছেন। অন্য গেট দিয়ে কোভিড (COVID) রোগী ঢুকছেন। সরকারি থেকে বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই তিল ধারণের জায়গা নেই। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের চিন্তা বাড়াচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বিধি শিকেয় তুলে পুজোর বাজার করার ভিড়!
মঙ্গলবার বিকেলের কথা। কোভিড মুক্ত হয়ে ৩০ জনের ছুটি হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকে। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই ভরতি হয়েছেন ২০ জন। বেলেঘাটা আইডির প্রিন্সিপাল অণিমা হালদারের কথায়, “গড়ে ১০ জনের রোজই ছুটি হয়। কিন্তু বেড খালি থাকছে না। প্রতি মুহূর্তে রোগী আসছেন।” প্রতিদিনই তিন হাজারের উপর মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতায় (Kolkata) সে সংখ্যাটা সাড়ে ছ’শোর আশপাশে। পুজোর পর এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। একই অবস্থা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজেও। সেখানে ১১০টি বেডে কোভিড চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার পাঁচ জনের ছুটি হলেও রাত কাটেনি। বেড আবার ভরতি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এর পরও মানুষ মাস্ক না পরেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। এমনটা চলতে থাকলে পুজোর পর কী হবে? তা ভেবে পাচ্ছেন না এম আর বাঙুর হাসপাতালের কর্মীরাও। দুই বিল্ডিং মিলিয়ে ৬৭০ বেডে কোভিড চিকিৎসা চলছে এই হাসপাতালে। সুপার শিশির নস্কর জানিয়েছেন, পাঁচ জনের ছুটি হলে পাঁচ জন নিয়মিত ভরতি হওয়ার অপেক্ষায় থাকছেন।
প্রশ্ন উঠছে, আক্রান্তের এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফকে কি পাত্তা দিতে চাইছেন না উৎসব পাগল মানুষ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, পুজোর মাতামাতির প্রভাব টের পাওয়া যাবে নভেম্বর থেকে। এই নভেম্বরই আবার নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মাস। ফি বছর শীত প্রবেশের এই সময়টায় অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এবার কোভিডের সঙ্গে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হবে বলেই অনুমান শহরের ভাইরোলজিস্টদের। কিছুদিন আগেও কলকাতার হাসপাতালগুলিতে স্রেফ শহরের রোগীরাই ভরতি হচ্ছিলেন। এখন সেখানে ভিড় করছেন মফস্বলের রোগীরাও। জেলার হাসপাতালের বেডও যে আর খালি নেই।
এদিকে বোধনের বাকি ১৪ দিন। ইতিমধ্যেই পুজোর কেনাকাটার ভিড়ের ছবি দেখা যাচ্ছে গড়িয়াহাট থেকে এসপ্ল্যানেডে। হাসপাতাল যাওয়ার পথে সে ছবি দেখে আঁতকে উঠছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। বেলেঘাটা আইডির প্রিন্সিপালের কথায়, “কয়েকদিন আগে গড়িয়াহাটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিলবিল করছে মানুষ। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই।” পিজি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, “দোকানদারদের অনুরোধ করছি যাঁরা মাস্ক পরছেন না কোনওভাবেই তাঁদের প্রবেশ করতে দেবেন না।” ইতিমধ্যেই প্রাক পুজোর কেনাকাটার একটি ছবি ভাইরাল। যেখানে দেখা যাচ্ছে গিজগিজ করছে মানুষ। কোথায় সামাজিক দূরত্ব? সে ছবি সোশ্যাল সাইটে দিয়ে হাতজোড় করেছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি লিখেছেন, “আপনাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায়িত্ব তো আমাদেরই নিতে হবে। পুজোর পর কী হবে সেটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।” রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫৩১৬ জনের। সচেতনতা না ফিরলে এই সংখ্যায় লাগাম দেওয়া অসম্ভব বলেই মত চিকিৎসকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.