ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: লকডাউনে স্বামী আটকে উত্তরপ্রদেশে। কলকাতায় শ্বশুরবাড়ির অন্যদের সঙ্গে ঘর করতে নারাজ স্ত্রী। হতাশায় এক বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন গৃহবধূ। এমনকী সঙ্গে স্বামী না থাকার হতাশা এতটাই যে, ঘাটে শিশুকে রেখে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। তবে বড়সড় বিপদ ঘটে যাওয়ার আগে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে টালা থানার পুলিশ গিয়ে মা ও সন্তানকে তাঁদের আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই টালার বাসিন্দা আমিনুদ্দিন বিশেষ কাজে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সেখানে আটকে পড়েন ওই ব্যক্তি। তিনি কোনওভাবেই ফিরতে পারছিলেন না কলকাতায়। এদিকে শ্বশুরবাড়ির অন্যদের সঙ্গে একেবারেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না আমিনুদ্দিনের স্ত্রী।
গত ৬ মে দুপুরে ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন বলে ছেলেকে নিয়ে বের হন। এরপর থেকেই তিনি বেপাত্তা। মোবাইল ফোন বন্ধ। টালা থানায় মিসিং ডায়েরি করেন পরিবারের লোকেরা। প্রশ্ন ওঠে, লকডাউনের সময় যেখানে কোনও গাড়ি চলছে না, সেখানে পায়ে হেঁটে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে গৃহবধূ কত দূরে যেতে পারেন? এর মধ্যেই মোবাইল ফোন অন করেন মহিলা। কখনও হাওড়া স্টেশন, আবার কখনও বড়বাজারে তাঁর মোবাইল ফোনের টাওয়ার পাওয়া যায়। টালা থানার ওসি অরুণ দে-র নির্দেশে বড়বাজার অঞ্চলে মহিলার খোঁজ করতে থাকেন পুলিশ আধিকারিকরা।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা পুলিশকে জানান, একদিন আগেই ওই গৃহবধূ ছেলেকে ঘাটে রেখে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাঁরা দেখতে পেয়ে বধূকে উদ্ধার করেন। কিন্তু এরপর গৃহবধূ এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্য নিতে চাননি। তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যান। পুলিশ তাঁর খোঁজে মধ্য কলকাতায় তল্লাশি শুরু করে। মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন দেখে শুক্রবার রাতে জোড়াসাঁকো এলাকার তারাচাঁদ দত্ত লেন ও রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকেই মা ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, টানা তিন দিন ধরে মহিলা ও তাঁর সন্তান অভুক্ত ছিলেন। শুধু ঘুরছিলেন রাস্তায় রাস্তায়। হতাশায় এভাবেই শেষ হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাবেন না বলে জানান। পুলিশকে গৃহবধূ এও জানান যে, হাওড়ায় তাঁর দিদি থাকেন। শেষে দিদির হাতেই মহিলা ও তাঁর সন্তানকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.