ছবি: প্রতীকী
সায়নী সেন: কুয়াশা ঘেরা সকাল। এদিক ওদিক হাতেগোনা দু-একটা মানুষের আনাগোনা। তারই মাঝে রাস্তার এককোণে শুয়ে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তরুণী। অন্তঃসত্ত্বার কাতর আর্তি শুনে এগিয়ে এলেন স্থানীয় কয়েকজন মহিলা। তাঁদের সাহায্যে রাস্তাতেই পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এমনই অভিজ্ঞতার সাক্ষী দক্ষিণ কলকতার প্রিন্স বক্তিয়ার শাহ রোড এলাকার বাসিন্দারা। এই ঘটনাকে ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির বাস্তবায়ন বলেই দাবি করছেন কেউ কেউ।
দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স বক্তিয়ার শাহ রোড এলাকার বাসিন্দা ওই অন্তঃসত্ত্বা। মঙ্গলবার রাত থেকেই শরীর তেমন ভাল যাচ্ছিল না। বুধবার সকালে হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরোন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী এবং তাঁর প্রথম সন্তান। রিকশা চড়ে কিছু দূর যাওয়ার পর শরীর আরও খারাপ হতে থাকে। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। প্রিয়াঙ্কা দাস নামে স্থানীয় এক মহিলা সমস্যা বুঝে অন্তঃসত্ত্বার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অন্তঃসত্ত্বাকে রিকশা থেকে নামিয়ে আনেন। দেখেন ততক্ষণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। সাহায্য চেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তা শুনে মলি ভট্টাচার্য নামে এলাকারই আরেক মহিলা এগিয়ে আসেন।
আর্তনাদ কানে যায় অনিতা বর্ধন নামে স্থানীয় আরেক মহিলার। তিনিও পৌঁছন ঘটনাস্থলে। তবে পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে আর হাসপাতালে যাওয়ার সময়ও ছিল না। বাধ্য হয়ে রাস্তাতেই শুরু হয় সন্তান প্রসবের তোড়জোড়। একটি চাদরের সাহায্যে ঘিরে ফেলা হয় রাস্তার এক কোণ। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন অন্তঃসত্ত্বা। ততক্ষণে রাস্তায় লোকে লোকারণ্য। সমস্ত ব্যস্ততা ভুলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন এলাকার প্রায় সকলেই।
সন্তান প্রসব হলে কী হবে, বাচ্চা যে কাঁদছে না! তাহলে কি আশঙ্কাই সত্যি হল? রক্ষা করা গেল না নবজাতককে, এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। এক সন্তানের মা অনিতা কাজে লাগান পূর্ব অভিজ্ঞতা। তাঁর মেয়ের জন্মের সময় ঠিক একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। জন্মের পর বেশ কিছুটা সময় কাঁদেনি তাঁর মেয়ে। দেখেছিলেন চিকিৎসক কেমন করে কাঁদিয়েছিলেন একরত্তিকে। কাজে লাগান সেই একই পদ্ধতি। আর তাতেই কেল্লাফতে! শীতের সকালের নীরবতাকে ভেঙে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে নবজাতক। যুদ্ধজয়ের হাসি নিয়ে অস্থায়ী প্রসবালয় থেকে বেরোন ওই মহিলা।
মা ও নবজাতককে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্তও করেন। আপাতত সুস্থ রয়েছে দু’জনেই। প্রিয়াঙ্কা, মলি, অনিতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সদ্যোজাতর মা এবং বাবা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.