সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: ছেলের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে টানা দু’দিন মৃতদেহ আগলে বসে রইলেন বৃদ্ধা মা। অবশেষে তীব্র দুর্গন্ধ প্রতিবেশীদের নাকে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে। পুলিশ এসে ডাকাডাকি করলেও কেউ দরজা খোলেনি। বন্ধ দরজা ভেঙে ছেলের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে মাকেও উদ্ধার করা হয়। অসুস্থ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। কোনও মানসিক অবসাদ থেকে মা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এই ঘটনায় ফের রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া দেখা গেল। শুক্রবার রাতে এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় দক্ষিণ কলকাতার রামগড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার ৫২ নম্বর রামগড়ের একটি বাড়িতে চার বছর ধরে ভাড়া থাকছিলেন মা ও ছেলে। বাবা সমীরেন্দ্রনাথ কুণ্ডু মারা যাওয়ার পর মাকে নিয়ে একাই থাকতেন বছর চল্লিশের সোমনাথ। সোমনাথের বৃদ্ধা মা বিগত বছর পাঁচেক কার্যত শয্যাশায়ী। ছেলে সোমনাথ কুণ্ডু কম্পিউটারের কাজ করতেন। গত কয়েকদিন ধরেই সোমনাথকে এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকালে রামগড়ে তীব্র কটু গন্ধ ছাড়তে শুরু করে। প্রতিবেশীদের পাশাপাশি সোমনাথদের বাড়িওলাও তীব্র এই কটু গন্ধ পান। গন্ধটি তঁার বাড়ির একতলার ঘর থেকে আসছে বলেই অনুমান করেন তিনি। তিনিই স্থানীয় একটি ক্লাবে বিষয়টি জানান। স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরাই নেতাজিনগর থানায় খবর দেন। তারপর পুলিশ এসে দরজা ভাঙতেই দেখা যায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা তঁার ছেলের পচাগলা দেহ আগলে বসে রয়েছেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধা মানসিক রোগগ্রস্ত। মা ও ছেলে ওই ভাড়াবাড়ির একতলায় থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় হোটেল থেকে খাবার কিনে সোমনাথ তাঁর মাকে খাওয়াতো বলে জানান প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীরা আরও জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই সোমনাথ তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্ডিস হয়েছে। অসুস্থ ছিলেন তিনি। দিন পনেরো আগেই সোমনাথের জন্ডিস হয় বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শও নিচ্ছিলেন। অসুস্থতা থেকেই সোমনাথের মৃতু্য হল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিন সোমনাথের পচাগলা ফুলে যাওয়া দেহ দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দিন দুয়েক আগে তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর কেন সোমনাথের মা কাউকে কিছু জানালেন না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মানসিকভাবে অসুস্থ থাকাতেই ছেলের মৃত্যুর খবর কাউকে দেননি মা। এমনকী ছেলের মৃত্যুশোকও সামলাতে পারেননি তিনি। তাই ছেলের দেহ আগলেই বন্ধ ঘরে বসেছিলেন তিনি। সোমনাথের বৃদ্ধা মা শারীরিকভাবে এতটাই অসুস্থ যে ছেলের মৃত্যুর পরও তিনি ঘরের দরজা খুলতে পারেননি। ঘরের দরজা খোলার মতো শারীরিক ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তবে প্রকৃত ঘটনা কী তা তদন্ত করে জানার চেষ্টা করছে নেতাজিনগর থানার পুলিশ। সোমনাথের দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি সোমনাথের মাকে চিকিৎসার জন্য নেতাজিনগর থানার পুলিশ কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে পাঠায়। তাঁর সুচিকিৎসার জন্যই পুলিশ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.