মোক্ষম হাতিয়ার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। মেপে খেলে পেটের অর্ধেক সমস্যা চলে যায়। এই ফাইবার আসলে কী? তার উপকারিতা জানাচ্ছেন সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. কালিদাস বিশ্বাস। লিখছেন সুমিত রায়।
ফাইব্রাস ফুড! হেলদি ডায়েটের খাদ্যতালিকায় এই নামটি যথেষ্ট পরিচিত। সাধারণত আমরা যাকে বলে থাকি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু খাবারে ফাইবার আসলে কী? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই লুকিয়ে থাকে। সাধারণত যে কোনও খাবারের ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ে যত মাথাব্যথা, ফাইবার নিয়ে সেই সচেতনতা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে খাবার হজমের ক্ষেত্রে এই ফাইবার বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সবচেয়ে বেশি উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের সমস্যায়, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের সমস্যা সবেতেই ফাইবার যুক্ত খাবার উপকারী।
ডায়েটারি ফাইবার চিনুন
কিছু উদ্ভিদজাত খাবার শরীর সরাসরি হজম হয়ে যায়, কিছু আবার শরীর হজম করতে পারে না বা হজম করা সত্ত্বেও শরীরে তা শোষিত হয় না। এই ধরনের খাবারগুলিকেই ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বলা হয়। অর্থাৎ এই ধরনের খাবারের কিছু অংশ হজমের পরও রাসায়নিক ভাবে অপরিবর্তিত থাকে।
১. সল্যুবল ডায়েটারি ফাইবার- এই ধরনের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার জলে দ্রবণীয়। তা অন্ত্রে দ্রবীভূত হয়ে জেলি জাতীয় জিনিস তৈরি করে, যা মল ত্যাগে সাহায্য করে। ওটস, বার্লি বা ইসবগুলের ভুসি- ইত্যাদি খাবার এই ধরনের ফাইবার সমৃদ্ধ।
২. ইনসল্যুবল ডায়টারি ফাইবার- যেটা জলে দ্রবণীয় নয়। আলু, ফুলকপি, বিনস, বাদামে এই ধরনের ফাইবার থাকে।
[ জানেন, খাবার চিবিয়ে না খেলে কি বিপদ হতে পারে? ]
কেন উপকার?
রোজকার খাদ্যতালিকায় এই ধরনের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন গবেষণায় এমন তথ্যও মিলেছে, যাঁদের খাদ্যে ডায়টারি ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে তাদের উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। এছাড়া যে সব রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখা সম্ভব তা হল-
বয়সজনিত কষ্ট দূর করে
অনেক বয়স্কদের মুখেই শোনা যায় বয়স বাড়ছে আর তার সঙ্গে বাড়ছে হজমের সমস্যা। পেট পরিষ্কার হতে চায় না। যদিও চিকিৎসকের মতে বয়সের সঙ্গে হজমের সমস্যা না থাকলেও পেট পরিষ্কারের সমস্যা থাকে। তাই প্রয়োজন খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। তাহলে ওষুধ না খেয়েও সমস্যা মিটতে পারে।
কখন কী খাবেন?
সকাল- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভেজানো আমন্ড বা কাঠবাদাম ৪-৫ টি খান। অবশ্যই খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে। এর পর অঙ্কুরিত কিছু খেলে ভাল, যেমন অঙ্কুরিত ছোলা, সবুজ মুগ এবং কালো মুগ। তাহলে সকাল সকাল ভাল পরিমাণে ডায়টারি ফাইবার এবং প্রোটিন দুই শরীরে যায়। ব্রেকফাস্টে আটার রুটি ও তরকারি প্রয়োজনীয় ফাইবারের অনেকটাই চাহিদা মেটাতে পারে। সারাদিনের সব খাবারেই সবজির মাত্রা বেশি রাখতে হবে।
দুপুর- ভাত, ডাল, মাছ খেলেও সঙ্গে রাখতে হবে স্যালাড যেখানে বিট, গাজর ও শসা বেশি করে রাখতে হবে। ভাতের পাতে সবজি বা তরকারি রাখতে হবে। তেমন হলে মাছের ঝোলে বিভিন্ন সবজি দিয়ে খান। ফুলকপি, শিম, বিনস, পেঁপে, বরবটি, পটল, ব্রকলি, ঠ্যাড়স ইত্যাদি সবজি হাই ফাইবার সমৃদ্ধ। বিকেলের দিকে ফল খেলে আরও উপকার। পেয়ায়ার, পেঁপে, আপেল, কমলালেবু, শাকআলু খান। ওবেসিটি কিংবা ডায়াবেটিস না থাকলে রোজ একটা করে কলা খান। বিভিন্ন দানা শষ্য যেমন, তিল, তিসি ও কুমড়োর দানাতে ফাইবার তো থাকেই সঙ্গে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন সমৃদ্ধ। যা পেটের সমস্যা মেটানোর পাশাপাশি হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
রাত- সূর্যাস্তের পর এমনিতেই একটু কম খেলে উপকার। রাতে রুটি ও তরকারি খাওয়া যেতে পারে। বেশি খিদে থাকলে তা মেটাতে বেশি করা স্যালাড খান।
[ নাসিকায় রক্তক্ষরণে অযথা আতঙ্ক নয়, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায় ]
জল মেপে
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল খেলে পেট পরিষ্কার হয় ভাল। ঠান্ডা ফ্রিজের জল না খাওয়াই ভাল। দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল খাওয়া খুবই জরুরি।
চাই শারীরিক সক্রিয়তা
বয়স বাড়ছে মানে কিন্তু চুপচাপ বসে থাকা একদম না। ঘুম থেকে উঠে একটু ফ্রি হ্যান্ড বা যোগব্যায়াম করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত অন্তত একটানা ৪৫ মিনিট হাঁটা দরকার। ওই শারীরিক গতিবিধি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বুঝে খেলে শরীর নিজের কাজ সঠিক ভাবে করতে পারে ফলে পেটের সমস্যা দূরে থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.