ছবি: সংগৃহীত
স্টাফ রিপোর্টার: চোখে চোখে কথা তো দূরস্থান! চোখে চোখ পড়লেই সরিয়ে নিচ্ছে। কারণ একজনের চোখ জবাফুলের মতো লাল! ফুলে আছে। রুমাল দিয়ে ঘন ঘন চোখ মুছছে। বর্ষা সবে শুরু। এর মধ্যেই কলকাতা তো বটেই, তামাম বঙ্গের আবালবৃদ্ধবনিতার একটা বড় অংশ আক্রান্ত হচ্ছে কনজাংটিভাইটিসে (Conjunctivitis)।
স্বাস্থ্যভবনের তথ্য বলছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চোখের সমস্যা নিয়ে যত রোগী আসছে তার ২০-২৫ শতাংশ কনজাংটিভাইটিস। সমস্যা হল, আক্রান্ত ব্যক্তির ২ ফুটের মধ্যে কেউ এলে সেও আক্রান্ত হয়। তাই দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
তবে কি কনজাংটিভাইটিসের নেপথ্যে থাকা ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসের কোনও মিউটেশন ঘটেছে? এখনই এমনটা বলতে নারাজ চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার মিউটেশন হয়েছে কি না তা পরীক্ষার বিষয়। কিন্তু কনজাংটিভাইটিস বেড়েছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত পনেরো দিনে আউটডোরে যত রোগী আসছেন তার ২০-২৫ শতাংশ কনজাংটিভাইটিস।”
সকালে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলছে না। আঠালো ভাব। আয়নার সামনে যেতেই চোখ টকটকে লাল। জ্বর হতেও পারে। নাও হতে পারে। এটাই উপসর্গ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অফথ্যালমোলজির সার্জন-অধ্যাপক ডা. সলিল মণ্ডলের কথায়, “চোখে চোখ পড়লে কনজাংটিভাইটিস, এমন ধারণা অবৈজ্ঞানিক। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত রুমাল বা গামছা, এমনকী হাত থেকেও রোগ সংক্রমিত হয়। ব্যাক্টেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস দ্রুত সংক্রমিত হয়। ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির চোখের সমস্যা অন্তত দুসপ্তাহ পর্যন্ত ভোগাতে পারে।” তিনি সাবধান করে বলেছেন, বাসে, ট্রেনে, মেট্রোতে আক্রান্ত ব্যক্তি হাত দিলেন, সেই হাত কেউ চোখে দিলে তাঁরও হয়। এইভাবে রোগ ছড়ায়।
বাড়িতে দুধের বাচ্চা। পারতপক্ষে বাইরে বের করা হয় না এমন শিশুকে নিয়েও আরআইও’তে মঙ্গলবার হাজির এক দম্পতি। সলিলের কথায়, “বাড়িতে কারও অবশ্যই চোখের সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু শিশুটি অরক্ষিত ছিল। হয় সেই ব্যক্তি তাকে কোলে নিয়েছিল, অথবা গামছা-রুমাল বা অন্য কোনও বস্তুর সংস্পর্শে এসেছিল শিশুটি। ফলে কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে।”
কী করবেন?
কনজাংটিভাইটিস হলেই পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ধুতে হবে বার বার। ব্যবহৃত রুমাল-গামছা আলাদা করতে হবে। দরকারে আক্রান্ত ব্যক্তি আলাদা ঘরে থাকবেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চোখের সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মানসবাবুর কথায়, “ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসককে বলতে হবে রোগের সমস্যার কথা। সেই অনুযায়ী সলিউশন বা মলম ব্যবহার করতে হবে।” মানসবাবুর যুক্তি, “অনেকেই দ্রুত সমস্যা কমানোর জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। এমনটা পারতপক্ষে উচিত নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.