ফাইল ছবি।
অভিরূপ দাস: করোনার (Corona Virus) দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধ্বস্ত দেশ। বয়স্ক এবং মাঝারি বয়সিদের ছাপিয়ে সংক্রমণ এখন ছড়িয়ে পড়ছে বাচ্চাদের মধ্যেও। এখনও পর্যন্ত ভারতের ৫.৮ শতাংশ শিশু করোনার কবলে পড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা উপসর্গহীন। আর এতেই রোগ চিহ্নিতকরণে দেখা দিচ্ছে সমস্যা। রিপোর্ট বলছে, ভারতে ৮ থেকে ২০ শতাংশ বাচ্চাকে আইসিইউতে ভরতি করা হয়েছে। বাকিরা বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছে। বাংলাতেও বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। আর এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় ঢেউ বাচ্চাদের জন্য আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই অগ্রিম সতর্কতা নিচ্ছে রাজ্যও। কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান করোনা আক্রান্ত, সংক্রমিত হলেই বা কী করা উচিত, এনিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করল স্বাস্থ্যদপ্তর।
ডা. অপূর্ব ঘোষ, ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী, ডা. কৌস্তব চৌধুরী, ডা. মিহির সরকার এবং ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি এই গাইডলাইনটি তৈরি করেছেন। যেখানে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করোনার লক্ষণ কী কী, কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে, তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণত শিশুদের ফুসফুসের উপরিভাগে সংক্রমণ বাসা বাঁধছে। ৮ বছরের নিচের বাচ্চাদের স্বাদ-গন্ধ যাচ্ছে না। করোনা হলে ১৭ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে।
কীভাবে বুঝবেন শরীরে করোনা হানা দিয়েছে?
১. ৮ বছরের ঊর্ধ্বে মাইল্ড করোনা হলে স্বাদ-গন্ধ চলে যেতে পারে।
২. অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২ হয়ে যেতে পারে। স্যাচুরেশন ৯৫-এর নিচে নামলেই তা মারাত্মক।
৩. ডায়েরিয়া আর বমি হতে পারে।
৪. খাবারের ইচ্ছা চলে যেতে পারে।
৪. শরীরে করোনা মারাত্মক প্রকোপ ফেললে হার্টবিট সমস্যা হতে পারে।
এই সমস্ত লক্ষণ দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বাচ্চার করোনা হলে কী করবেন?
১. স্বল্প এবং তার চেয়ে সামান্য বেশি করোনার প্রকোপ থাকলে প্রচুর জল খেতে হবে। অন্তত চার-পাঁচ লিটার জল খাওয়ান।
২. ডায়েরিয়া হলে ORS খেতে হবে।
৩. ভিটামিন C, ও জিঙ্ক দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এতে কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার চেয়ে ফল ও শাক-সবজি খাওয়ার উপর জোর দিতে বলছেন চিকিৎসকরা।
৪. জ্বর এলে প্যারাসিটামল ১৫ এমজি দিতে পারেন। তবে দিনে পাঁচবারের বেশি যেন এই ওষুধ না খাওয়ানো হয়।
৫. ৮ বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ৪ ঘণ্টার ব্যবধান রাখতে হবে।
৬. বাচ্চার নাক বন্ধ হলে স্যালাইন স্প্রে দিতে হবে।
৭. পেট খারাপের জন্য অ্যান্টি-বায়োটিক নয়, প্রো-বায়োটিক দিতে হবে।
৮. বমি হলে ডোমপেরিডোন গোত্রের ওষুধ দিতে হবে।
৯. জল খাইয়েও যদি ইউরিন কমতে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
১০. করোনা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছলে ডেক্সামিথাজোন .১৫ এমজি ১৪ দিন খেতে হবে।
১১. সাধারণ ক্ষেত্রে রেমডেসিভিরের প্রয়োজন নেই।
১২. স্যাচুরেশন ৯৪ শতাংশের নিচে না নামলে বাচ্চাকে স্টেরয়েড দেবেন না।
১৩. নেবুলাইজার দিতেও বারণ করা হচ্ছে।
১৫. আগে থেকে হাঁপানি থাকলে স্যালভুটামল গোত্রের ওষুধ দিতে হবে।
ভয়ের ব্যাপার কোথায়?
১. ইউরিন কমে যাওয়া।
২. জ্বর ফিরে ফিরে আসা।
৩. বাচ্চার খাওয়া কমে যাওয়া।
৪. বাচ্চা বারবার ক্লান্ত হয়ে পড়া।
এসব ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট করাতে হবে।
সাধারণত বেশিরভাগ বাচ্চাদের করোনা উপসর্গহীন। খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না শরীরে। কিন্তু ওরা স্প্রেডার হয়ে উঠছে। আর তাই তাদের থেকে বয়স্কদের দূরে থাকারই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.