গৌতম ব্রহ্ম: এতদিনের এত আলোচনা, এত গবেষণা, সবই কি ভুল দিশায় প্রবাহিত? ফের কি নতুন করে ভাবার সময় এল? অ্যান্টিবডি নয়, কোভিড মোকাবিলার ব্রহ্মাস্ত্র ‘টি লিম্ফোসাইট’!
এই তথ্য সামনে এনে অ্যান্টিবডি, হার্ড ইমিউনিটির প্রচলিত তত্ত্বকে জবরদস্ত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে দু’টি গবেষণাপত্র। প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ট্রায়াল রানের দৌড়ে থাকা একাধিক বি-সেল ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়েও। গবেষকদের দাবি, টি-সেল (টি লিম্ফোসাইল সেল) ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে শরীরে টি-মেমরি লিম্ফোসাইট তৈরি করা গেলেই করোনা বাগ মানবে, নচেৎ নয়। ঘটনা হল, বর্তমানে সারা বিশ্বে কোভিড প্রতিরোধী যে ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বাজারীকরণ নিয়ে চর্চা হচ্ছে, তা সবই বি-সেল ভ্যাকসিন, যা কি না বি-লিম্ফোসাইট বা মেমরি সেল বা অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য প্রয়োগ করা হবে।
এখানেই শুরু টি সেল বনাম বি সেল লড়াই! এই মুহূর্তে তামাম বিশ্বের তাবড় মেধা, তাবড় শক্তির পাখির চোখ করোনা-ভ্যাকসিন উদ্ভাবন। ঠিক তখনই এক মেরুতে এসে দু’টি সংস্থার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী গবেষণা স্বাভাবিকভাবেই সাড়া জাগিয়েছে। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট ও ইতালির রোমের ব্যামবিনো গেসু চিলড্রেন্স হসপিটালের রিসার্চ ল্যাবরেটরি। দু’টি সংস্থার দাবি, করোনা রুখতে অ্যান্টিবডি নয়, সেল মেডিয়েটেড ইমিউনিটি বেশি কার্যকরী। গবেষণা-নিবন্ধগুলো বায়ো ও মেডিক্যাল আর্কাইভে জমা পড়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রবলভাবে আক্রান্ত বা সংকটজনক রোগীর রক্তে ধীরগতিতে মনোসাইটের সংখ্যা বাড়তে থাকে, এবং বহুদিন পর্যন্ত আইজি-এ, আইজি-জি শ্রেণির অ্যান্টিবডির মাত্রা বজায় থাকে। আবার কম উপসর্গযুক্ত রোগীর রক্তে মনোসাইটের সংখ্যাধিক্য এবং আইজি-এ, আইজি-জি শ্রেণির অ্যান্টিবডির সামান্য উপস্থিতি নজর করা যায় বলে জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। দেখা যাচ্ছে, লক্ষণহীন আক্রান্ত ও তাঁর সেরোনেগেটিভ পরিবারের সদস্যদের রক্তে টি-লিম্ফোসাইটের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি। এও দেখা যাচ্ছে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস আক্রান্তের দেহে প্রচুর পরিমাণে ‘মেমরি’ টি-লিম্ফোসাইট তৈরি করছে, যা কি না ভবিষ্যতে করোনা মোকাবিলায় কাজে লাগবে। এমনটাই পর্যবেক্ষণ ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের।
তাঁর বক্তব্য, “গবেষষকরা দেখাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী বি-মেমরি লিম্ফোসাইট তৈরি করতে পারে না, সেহেতু আইজি-জি অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির তত্ত্বও খারিজ হয়ে গেল। উপরন্তু দেখা গেল, উপসর্গহীন ব্যক্তির শরীরে বেশিদিন আইজি-জি অ্যান্টিবডি থাকে না। বরং থাকে আইজি-এ শ্রেণির অ্যান্টিবডি। তাই আইজি-জি সেরোসার্ভিল্যান্সও প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.