অভিরূপ দাস: কত আর ঘরবন্দি থাকতে ভাল লাগে! ছাদে গিয়ে একটু ঘূর্ণিঝড় উপভোগ করা যাক। শহরের বহুতলে বসে এমন চিন্তা মাথায় ভুলেও আনবেন না। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে কয়েকগুণ। চিকিৎসকদের সতর্কবাণী, নিজে তো অবশ্যই, বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যটি শত বায়না করলেও তাকে ছাদে যেতে দেবেন না এখন।
উপকূল ভাগে ক্রুদ্ধ হাওয়া তাণ্ডব চালালেও শহর কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় মানেই তুমুল বৃষ্টি। বিগত কয়েকদিন ধরে ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল শহরবাসী। ডাক্তারবাবুদের আশঙ্কা, করোনা আবহে ঘরবন্দি আমজনতা বৃষ্টিতে ভিজতেই না আকুল হয়।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, কোভিডের (COVID-19) এই সময়টা অন্যান্য সময়ের চেয়ে আলাদা। মনে রাখবেন হাসপাতালে বেড নেই। গঙ্গায় কীভাবে দেহ ভেসে আসছে দেখেছেন। তা যদি অনুভব করে থাকেন, ছাদে গিয়ে একটু বৃষ্টির ছাট গায়ে মাখলাম এমন চিন্তা আনবেন না। বৃষ্টিতে ভিজে আচমকা জ্বর এলে কিন্তু সমূহ বিপদ। বৃষ্টিতে ভিজে যে সর্দি জ্বর আসে তাও ভাইরাস বাহিত। কিছু ক্ষেত্রে তা করোনা ভাইরাস (Corona virus) গ্রুপেরই অন্য কোনও ভাইরাস। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কিংবা এন্টেরো ভাইরাস।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের আবার আশঙ্কার কারণ ছোটদের সাম্প্রতিক অবস্থা। বাচ্চারা টানা অনেকদিন ঘরবন্দি। স্কুল বন্ধ। বাইরে বেরতে পারছে না দীর্ঘদিন। বৃষ্টি পড়লেই তারা ছাদে যেতে বায়না করে। অনেক সময় বাধ্য হয়েই মা-বাবা তাদের অনুমতি দেন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, এবছর সেটা বন্ধ রাখুন। বৃষ্টি পড়ার সময় বাচ্চাকে কোনও কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখুন। যশ বা ইয়াসের (Cyclone Yaas) বৃষ্টিতে ভিজতে দেবেন না। বিশিষ্ট এই শিশু চিকিৎসকের ব্যাখ্যা, করোনার কারণে যে জ্বর হয় আর ঠান্ডা লেগে যে জ্বর আসে সেই দু’ধরণের ফ্লু-ই কিন্তু ভাইরাসবাহিত। যদি বৃষ্টিতে ভিজে এন্টেরো ভাইরাসের প্রকোপে বাচ্চাটির জ্বর আসে তাহলেই বিপদ। এমন জ্বরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ তলানিতে চলে আসে।
চিকিৎসকের কথায়, সাধারণ বৃষ্টিতে ভিজে যে জ্বর আসে তাতে শিশুর ফুসফুসের উপরিভাগে সংক্রমণ দেখা দেয়। এর ফলে মিউকাস মেমব্রেনটা দুর্বল হয়ে পরে। শক্তিশালী মিউকাস মেমব্রেন অনেক জীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কিন্তু দুর্বল মিউকাস মেমব্রেন বাইরের জীবাণুকে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করা থেকে আটকাতে পারে না। এই সুযোগে আঘাত হানতেই পারে সার্স কোভ২।
যদি করোনা ভাইরাস গ্রুপের অন্য কোনও ভাইরাস শিশুকে আক্রমণ করে তাহলে সামান্য হলেও নিশ্চিন্ত। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কথায়, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এলে তা বাড়াবাড়ির আকার ধারণ করতে পারে। বাঁক নিতে পারে নিউমোনিয়ার দিকে।
মোট সাতটি গোত্রের ভাইরাসের কারণে সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে। এর মধ্যে করোনা গোত্রের অন্য কোনও (কোভিড- ১৯ বাদে) ভাইরাসের আক্রমণে জ্বর সর্দি হলে পরবর্তীকালে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য হলেও কম থাকে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঝড় বৃষ্টির সময় যদি একান্তই বাড়ি থেকে বেড়োতে হয়, ছাতা নিয়ে বেরোন। নয়তো বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বেরোবেন না। যদি মাঝ রাস্তায় বৃষ্টি নামে তাহলে শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়িয়ে যান। হাজার ব্যস্ততা থাকলেও করোনা আবহে বৃষ্টিতে ভিজবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.